আন্দোলন যেখানে ব্যর্থ (Odeonsplatz, Munich, Germany)

প্র্যতেকটা গল্পের যেমন এক নায়ক থাকে, তেমনি সমান্তরাল ভাবে থাকে এক ভিলেনের গল্প – আর সেই ভিলেনের কথা না বললে যেন গল্প বলাই অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। তেমনি জার্মানির মিউনিখে এলে জার্মানির সেই কুখ্যাত ভিলেনের গল্প প্রতি পদে, ফিরে ফিরে শোণা যায়।

মিউনিখের ব্যস্ত স্কোয়ার Odeonsplatz – শহরের প্রধান রাস্তা Ludwigstrasse এসে এই স্কোয়ারে মিলেছে, সর্বদা প্রচুর উৎসাহী টুরিস্টের আনাগোনায় ভরে থাকে এই চত্বর, বহু ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য এর চারিদিকে – একদিকে ফ্লোরেন্সের Loggia dei Lanzi  র অনুকরণে, উনিশ শতাব্দীর তৈরি Feldherrnhalle মঞ্চ – মঞ্চে জার্মানির উনিশ শতকের ঐতিহাসিক মিলিটারি লিডারের ব্রোঞ্জ মূর্তি বিরাজমান, আরেক দিকে হলুদ রঙের Theatine Church  এই চত্বরের শোভা বাড়ায়।

বেভেরিয়ান আর্মিকে সম্মান জানিয়ে তৈরি এই ঐতিহাসিক Feldherrnhalle মঞ্চ যে কি ভাবে জার্মানির বিংশ শতাব্দীর কালজয়ী ভিলেনের সঙ্গে জুড়ে গেল! ১৯২৩ সালের নভেম্বরের এক সকালে হিটলারের অনুগামীরা বেভেরিয়ান স্টেট পুলিশের বিরুদ্ধে এক শোভাযাত্রা বের করে – সদ্য গঠিত নাৎসি পার্টির শোভাযাত্রা দেখে শঙ্কিত হয়ে বেভেরিয়ান পুলিশ শোভাযাত্রা লক্ষ্য করে গুলি চালানো শুরু করে দেয় – নাৎসি শোভাযাত্রার ষোল জন ও পুলিশের চারজন মারা যায় সেই সংঘর্ষে, ও হিটলারকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।

বেভেরিয়ার স্টেটের বিরুদ্ধে সেই ছিল হিটলারের প্রথম প্রকাশ্য আন্দোলন, যা কিনা বহু মিউনিখবাসী অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করেছিল, হিটলারের সঙ্গ দিয়েছিল। হিটলারের নাৎসি পার্টির প্রথম বিফল এই আন্দোলনকে Beer Hall Putsch নামে অভিহিত করা হয়, কারণ মিউনিখের বিখ্যাত এক বিয়ার হল থেকে নাৎসি পার্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল, প্রধান রাস্তা Ludwigstrasse ধরে Odeonsplatz এ এসে জমায়েত হয়েছিল সেই শোভাযাত্রার ভিড়।

আর সেই ব্যর্থ আন্দোলনের ঠিক দশ বছর পরে হিটলার ক্ষমতায় এসে Odeonsplatz এর এই জায়গাকেই তার বাৎসরিক বিজয় শোভাযাত্রার জায়গা হিসাবে বেছে নেয় – সেই ঘটনাকে স্মরণ করার জন্যে হিটলার বাহিনী চত্বরের মধ্যে Beer Hall Putsch এ মৃত ষোল জন নাৎসি সমর্থকের স্মরণে, নাৎসি পার্টির প্রতীক ঈগলের মূর্তি স্থাপন করে, আর প্রত্যেক পথচারীকে হিটলার স্যালুট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল – আবার সবাই হিটলার স্যালুট দিচ্ছে কিনা দেখার জন্যে দু’জন এস এস অফিসার সর্বদা পাহারায় থাকতো। সম্পূর্ণ মিউনিখ সাক্ষী হয়েছিল সেই একনায়কতন্ত্রের। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে মিউনিখ শহর থেকে হিটলারের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলা হয়।

যাইহোক, মিউনিখবাসীরা সেই খলনায়কের নাম আর মুখেও আনে না, কিন্তু এখানে এলে গল্পের সেই ভিলেনের উপস্থিতির কথা যে ফিরে ফিরে আসে। হোক না ব্যর্থ আন্দোলন, কিন্তু Odeonsplatz   এর ঐতিহাসিক এই আন্দোলন বেদীর সঙ্গে যে সেই খলনায়কের আন্দোলনের গল্প জুড়ে গেছে, আর সেই গল্প শোণার জন্যে আজও বহু মানুষ ভিড় করে এই চত্বরে।            

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Germany, Travel, Western-Europe and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s