শেষ এপ্রিলের উজ্জ্বল দিনের শেষে গভীর নীল সন্ধ্যা নামার তোড়জোড় শুরু হয় মিউনিখের বুকে। সন্ধ্যার মুখে মিউনিখের চারিদিক আলোয় আলোময় হয়ে যায় – সেজে ওঠে মিউনিখের প্রধান স্কোয়ার Marienplatz বা Mary’s Square এর প্রতিটি স্থাপত্য। স্কোয়ারের একদম মধ্যে মেরীর স্তম্ভ Mariensäule এর নামানুসারেই এই স্কোয়ারের নাম Marienplatz হয়েছে।
এই স্কোয়ারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপত্য মিউনিখের সরকারী দপ্তর New Town Hall, চারশোটা রুমের বিশাল এই স্থাপত্য Marienplatz এর অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। নীচের এক ঘরে অবশ্য টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস, রেস্টুরেন্ট ও নানান ছোট দোকান, কিন্তু উপরের ঘর গুলোয় সরকারী দপ্তর বসে – সন্ধ্যায় এর আলোক সজ্জার জমক দেখে তো চোখ ফেরানোই দায় হয়ে দাঁড়ায়।
সন্ধ্যার আলো আঁধারে, গথিক স্টাইলে তৈরি এই স্থাপত্যের প্রতিটি খাঁজ যেন অতীতের কোণ এক গহন রহস্যের খোঁজ দেয়, যেন বহু বলা, না বলা গল্প আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে আনন্ত কাল ধরে। আর স্কোয়ারের অন্য দিকে late-gothic স্টাইলে তৈরি, আকারে অনেক ছোট Old Town Hall একটু যেন অবহেলিত হয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
এই জমজমাট স্কোয়ারও যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মারাত্মক ক্ষতির কবল থেকে মুক্তি পায় নি, বোমের আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল Marienplatz বহু স্থাপত্য। তবে সময় খুবই দ্রুত ইউরোপের সমস্ত ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়েছে।
সন্ধ্যায় এখন এই স্কোয়ার স্থানীয় মানুষ ও টুরিস্টের সহজ বিনোদনের ঠিকানা – চারপাশের প্রচুর রেস্টুরেন্ট, বিয়ার বার, স্যুভেনিরের দোকান, মানুষের নিশ্চিন্ত সময় যাপন, সব মিলিয়ে বেশ এক জমজমাট ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর টুরিস্টদের কাছে, নতুন জায়গায় সন্ধ্যার মুখে ব্যস্ত স্কোয়ারের জনজীবনের আলোকিত ছবিও বহু আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রচুর টুরিস্ট তাই সন্ধ্যা নামার আগেই মিউনিখ দেখার জন্যে বেরিয়ে পড়েছে।
সন্ধ্যা নামে হালকা পায়ে, গাঢ় হয় অন্ধকারের রং, আকাশ কিন্তু তখনো ঘন ফিরোজা নীল, দূর দেশে এসে সন্ধ্যা নামা দেখা আমায় যেন বড় বিষণ্ণ করে, একাকী করে দেয়, গহন মনের কোন এক কোণ থেকে উঠে আসে ঘরে ফেরার এক করুণ ডাক – ফিরে আয়, ঘর ছাড়া উদাসীন এক শূন্যতা গ্রাস করে যেন – কিন্তু, মিউনিখের শহর কেন্দ্রে এসে এই শহরের বুকে ধীর পায়ে সন্ধ্যা নামা দেখা এক নতুন অভিজ্ঞতা, এখানে কি বিষণ্ণতা, উদাসীনতা সাজে? তাই, সহজ ভাবে ভিড়ের একজন হয়েই যে দূর দেশের বহু সন্ধ্যাকে বরণ করে নিতে হয়।