মিউনিখ শহরের সংস্কৃতির মূল রন্ধ্রে আছে বিয়ারের স্রোত। সন্ধ্যায় মিউনিখ শহর কেন্দ্রের প্রতিটি বিয়ার হল স্থানীয় মানুষ ও টুরিস্টদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে, গমগম করে। গত কয়েকশো বছর ধরে এই বিয়ার কালচার মিউনিখের মানুষের শিরায় শিরায় প্রবাহিত। বহু আগে থেকেই নানা পেশার মিউনিখবাসীরা দিনের শেষে বিয়ার হলে বসে এক মগ বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে রাজনীতি, যুদ্ধ, সংস্কৃতি আলোচনার তুফান তুলে এসেছে।
মিউনিখের বিয়ারের ইতিহাস বহু পুরনো। বিয়ার হল ‘Hofbräuhaus’ মিউনিখের বিখ্যাত বিয়ার হল। ষোল শতাব্দীতে বেভেরিয়ার ডিউক রাজকীয় brewery র এই বিয়ার হলটি স্থাপন করেন ও সাধারণের জন্যে খুলে দেন। মিউনিখের সবচেয়ে পুরনো, ঐতিহাসিক এই রাজকীয় বিয়ার হল তাই মিউনিখের এক টুরিস্ট আকর্ষণ। শোণা যায়, ১৮২৩ এর শীতকালে মিউনিখের অপেরা হাউসে আগুন ধরে গেলে, দমকল বাহিনী আবিষ্কার করে জল জমে বরফ হয়ে গেছে, তখন এই Hofbräuhaus বিয়ার হলের বালতি বালতি বিয়ার দিয়েই অপেরা হাউসের আগুন নেভানো হয়েছিল। মিউনিখের অক্টোবর ফেস্টের সুচনাও কিন্তু Hofbräuhaus এর বিয়ার দিয়েই হয়েছিল।
বেভেরিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে Hofbräuhaus এর বিয়ার ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। সতেরো শতাব্দীতে সুইডেনের সঙ্গে ত্রিশ বছরের যুদ্ধে যখন সুইডেনের রাজা বেভেরিয়া দখল করে নিল ও হুমকি দিল পুরো মিউনিখ জ্বালিয়ে দেবে, এক শর্তেই সুইডিশরা শান্তি পূর্ণ ভাবে মিউনিখ ছেড়ে যেতে পারে যদি প্রচুর বিয়ার দেওয়া হয়। এমনকি মোজার্টেরও প্রেরণা ছিল Hofbräuhaus বিয়ার হলের বিয়ার কালচার।
জার্মানির ইতিহাসে মিউনিখের বিয়ার হল গুলোর যথেষ্ট অবদান আছে। এমনকি, হিটলারের রাজনীতির প্রথম হাতেখড়ি হয় মিউনিখের বিয়ার হল গুলোয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরে মিউনিখের বহু মানুষ বিয়ার হলে বসে রাজনীতির ব্যর্থ আলাপ আলোচনায় সময় কাটাতো, আর সেই বিয়ার হলেই হিটলার তার রক্ত গরম করা ভাষণ দিয়ে মিউনিখবাসীর বিয়ারের হালকা নেশা কাটিয়ে দিয়েছিল। আর বিয়ারের সেই নেশা কাটিয়ে সমগ্র জার্মানি ডুবে গিয়েছিল হিটলারের বক্তৃতার নেশায়। ন্যাৎসি পার্টির সুচনাই হয়েছিল মিউনিখের Hofbräuhaus বিয়ার হল থেকে, প্রথম দিকে ওদের মিটিং, রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা, নীতি সব কিছুই এই বিয়ার হলেই হয়েছিল। Hofbräuhaus বিয়ার হলে প্রায় দু’হাজার জার্মান মানুষের সামনে হিটলার তার পার্টির প্রথম প্রোগ্রাম পেশ করেছিল।
যাইহোক, বিয়ার হলেই মিউনিখের আসল কালচারের দেখা পাওয়া যায়। যখন মিউনিখের জাতীয় সংস্কৃতিই বিয়ার হল, তাই মিউনিখে এসে একবার বিয়ার হলে উঁকি দিতেই হয়। অবশ্য বিয়ার হল শুধু যে বিয়ারের জন্যেই বিখ্যাত তা নয়, খুব ভালো বেভেরিয়ান সুখাদ্যের ঠিকানাও কিন্তু বিয়ার হল। সুখাদ্য, বিয়ার আর মিউজিক – সব নিয়েই মিউনিখের বিয়ার হলের বিয়ার সংস্কৃতি।