মিউনিখ শহরের একদম কেন্দ্রে, এই ইংলিশ গার্ডেনে বেভেরিয়ার অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন উঠে এসেছে। এখানে শহরের বুকে বসেই অনুভব করে নেওয়া যায় বেভেরিয়ার গ্রামীণ সৌন্দর্যের ঝলক। এক দিকে Isar নদী, মানুষের তৈরি ঝর্ণা, প্রচুর সবুজ – সব মিলিয়ে বিশাল এই ইংলিশ গার্ডেন যেন মিউনিখের প্রাণকেন্দ্র, কিংবা ফুসফুস। শহর কেন্দ্রের এই ইংলিশ পার্কে মিউনিখবাসীরা রোদ্র স্নান থেকে শুরু করে খেলাধুলা, সাইকেল চালানো, ঝর্ণার বুকে সার্ফিং থেকে শুরু করে সবই করে – শহরের মাঝে এই সবুজকে মিউনিখবাসীরা যেন প্রান ভরে উপভোগ করে, ফুসফুস ভরে তাজা অক্সিজেন নিয়ে ফিরে যায় নগরের দৈনন্দিনতায়।
পৃথিবীর কয়েকটা বিশাল শহুরে পার্কের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে এই পার্ক, প্রায় নয়শো একরের উপরে বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই পার্ক। এমনকি নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের আয়তনের চেয়েও বড় এই পার্ক। শহরের কেন্দ্রের মধ্যে এই ইংলিশ গার্ডেনের এক অংশে আবার নগ্নতাকেও প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে – এক অংশে ন্যুড বীচ যা সাধারণ টুরিস্টদের এড়িয়ে চলাই ভালো।
এই বিশাল পার্কের নাম ‘ইংলিশ গার্ডেন’ শুনে আশ্চর্য লাগতেই পারে, জার্মানির ভেতরে ইংলিশের প্রভাব কি করে হলো। তবে এই বিশাল পার্কের লেন্ডস্কেপ ডিজাইনের পেছনে অবশ্য আমেরিকান-ব্রিটিশ ফিজিসিস্ট Sir Benjamin Thompson এর যথেষ্ট অবদান আছে। তিনিই ইংলিশ পার্কের ল্যান্ডস্কেপের অনুকরণে এই বিশাল পার্কের নক্সা তৈরি করেন। আঠারো শতাব্দী ও উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটেনে ও ইউরোপের নানা জায়গায় ইংরেজদের এই বিশেষ পদ্ধতিতে অপূর্ব বাগান তৈরি খুবই প্রচলিত ও জনপ্রিয় হয়েছিল, তাই ইউরোপের নানা জায়গায় ইংলিশ পদ্ধতিতে বাগানের ল্যান্ডস্কেপ তৈরি খুবই জনপ্রিয় হয়ে পড়ে।
এই বাগানে শুধু যে ইংলিশ প্রভাব পড়েছে তা নয় – জাপানিজ ও চাইনিজ প্রভাবও পড়েছে। ইংলিশ গার্ডেনের এক অংশে এক চাইনিজ বিয়ার গার্ডেন স্থানীয় মানুষ ও টুরিস্টদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
শেষ এপ্রিলে মিউনিখে আবহাওয়া বেশ ভালোই – না গরম না ঠাণ্ডা, তাই পার্কের দীর্ঘ আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে মিঠে রোদ পিঠে নিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় বহু দূর, সবুজের মাঝে কাটিয়ে দেওয়া যায় ইস্টার ছুটির দুপুর। কিংবা পার্কের বিশাল হলুদ সবুজ মাঠে বসে দেখা যায় মিউনিখ বাসীদের ছুটি কাটানোর ধরণ, তাদের খেলাধূলা, অবসর যাপন। ইংলিশ গার্ডেনের সবুজ মাঠে বসে হাজার হলুদ ফুলের সম্ভাষণে আমাদের ছুটির হলুদ দুপুর আরও যেন রঙিন হয়ে ওঠে।
চমৎকার সব ছবি। সত্যিই অসাধারণ !!
ধন্যবাদ।