শীতের সময় তুলুসের ক্রিসমাস বাজার, সুপার মার্কেটের কেক পেস্ট্রির সেকশন, পাড়ার স্থানীয় পেস্ট্রির দোকানের শো কেস নানা রঙের উজ্জ্বল ছোট গোলাকার মিষ্টিতে ছেয়ে যায় – উজ্জ্বল নানা রং, তাই স্বভাবতই ওদের দিকে চোখ চলে যায়। আর একবার যদি ঐ খুদে মিষ্টির কুড়কুড়ে অথচ নরম স্বাদ মুখে লেগে যায়, তাহলে তো মিষ্টি প্রেমীদের এক ঘূর্ণাবর্তে পড়ে গিয়ে বার বার ঐ স্বাদ চাখতেই হয়, বার বার পেস্ট্রির দোকানে ফিরে আসতেই হয় ঐ খুদে মিষ্টির টানে।
ঐ খুদে মিষ্টি গুলোকে প্রথম চেখে দেখেছিলাম এক ফরাসী বন্ধুর বাড়ীতে, বন্ধুটি হেসে মিষ্টির বাক্স এগিয়ে দিয়ে বলেছিল – আমাদের দেশের মিষ্টি খেয়ে দেখো, এর স্বাদ ভুলবে না, এদের বলে ম্যেকারো (Macaron)।
সত্যি অদ্ভুত এর স্বাদ, প্রথমে তো বেশ কুড়কুড়ে, কিন্তু মুখে দিলেই গলে যায়। ডিমের সাদা অংশ, আইসিং সুগার, আলমন্ড গুড়ো দিয়ে তৈরি এই ম্যেকারোর নানা রঙের সঙ্গে আবার নানা স্বাদ জড়িয়ে থাকে, যেমন খয়েরি মানে চকোলেট স্বাদ, সবুজ মানে পেস্তা বাদামের স্বাদ, কমলা লেবু, মধু, লেবু, স্ত্রবেরি আরও কতো নানা স্বাদের ম্যেকারো তুলুসের বাজারে ছেয়ে যায়, প্র্যত্যেকটা স্বাদের ম্যেকারো আবার নিজস্ব স্বাদে অনন্য। আবার ফরাসীরা ম্যেকারোর নতুন নতুন স্বাদ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও ভালোবাসে। তবে আমাদের ম্যেকারোর ট্র্যাডিশনাল স্বাদই ভালো লেগেছে।
ফ্রান্সের প্রত্যেকটা শহর, গ্রামের আবার ম্যেকারো তৈরির পদ্ধতি ও স্বাদ আলাদা। তাপমাত্রা ও আদ্রতার একটু হেরফেরেই নাকি ম্যেকারোর স্বাদে প্রভাব পড়ে যায়। এবং এই ম্যেকারোর স্বাদ পরিবর্তনের মধ্যেও লুকিয়ে আছে ফরাসী খাদ্য সংস্কৃতির অহং বোধ। তুলুসের ক্রিসমাস বাজারে পাশের গ্রাম থেকে ম্যেকারো বিক্রি করতে নিয়ে আসে এক পরিবার, লাইনে দাঁড়ানো প্রচুর মানুষকে মেপে মেপে ম্যেকারো বিক্রির মধ্যে ওদের মুখে ফুটে ওঠে ঠোঁট চাপা এক তৃপ্তির হাসি, বা সঠিক স্বাদের ম্যেকারো তৈরির অহং বোধ কিংবা ম্যেকারো তৈরির প্রতি ভালোবাসাবোধ।
যদিও এই বিশেষ মিষ্টি ফ্রান্সের নিজস্ব, কিন্তু ইউরোপের নানা জায়গায় ম্যেকারো দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডেও দেখেছি ম্যেকারোর প্রচুর আধিপত্য, সুইস কেক পেস্ট্রির শো কেস আলো করে দেয় এই ম্যেকারো।
ফরাসী ক্রিসমাসের নানান খাওয়া দাওয়ার মধ্যে ম্যেকারোর উপস্থিতি অপরিহার্য। খাওয়া দাওয়ার শেষে এক কাপ কালো কফির সঙ্গে যে কোন স্বাদের এক ম্যেকারো – তবেই তো সম্পূর্ণ হয় ক্রিসমাস লাঞ্চ।
বাংলা দেশের খাওয়া