ফরাসী খাওয়া দাওয়ার গল্প – তিন (Le Fromage)

ফ্রান্সে এসে প্রথম এক বন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে এক বিটকেল গন্ধ পেয়ে ভদ্রতা বশে কিছুই বলতে পারি নি। খাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল, খোলা রান্না ঘরের লাগোয়া বসার ঘর, যতবারই গৃহ কর্তা ফ্রিজের দরজা খুলছে বিটকেল গন্ধটি নাকে সজোরে ধাক্কা মারছে। কিছুতেই বুঝতে পারছি না গন্ধটা কিসের। অবশেষে খুবই বিনীত ভাবে বললাম – তোমরা কি কোন গন্ধ পাচ্ছ? খুবই স্বাভাবিক ভাবে গৃহকর্ত্রী উত্তর দিল – ও, আচ্ছা, ও তো চীজের গন্ধ – লে ফোমাজ। ওর স্বভাবই হল ফ্রান্সের বাজারের সমস্ত ধরণের চীজ কিনে এনে স্বাদ নেওয়া। অনেকদিন ফ্রান্সে থেকে এখন আমার চীজের গন্ধ আর নাকে লাগে না। দেখবে তোমরাও অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

তারপর তো দিন গড়িয়ে গেছে, ফ্রান্সের যে কোন খোলা বাজারে বা সুপার মার্কেটের কোন এক বিশেষ দিকে গেলে সেই বিটকেল গন্ধটি পেয়েছি। একটু একটু করে ফ্রান্সের নানা ধরণের চীজের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, ফরাসী চীজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে, নানা ধরণের চীজের স্বাদ নিয়েছি, আবার কোন কোন চীজের গন্ধে মুণ্ডুও ভরপুর হয়েছে।

প্রায় সাড়ে তিনশো থেকে চারশো প্রজাতির চীজ ফরাসী খাদ্য সংস্কৃতির অন্তর্গত। স্থানীয় ফরাসী বাজারে চীজ কিনতে গেলে, তাই মাথা খারাপেরই জোগাড় হয়। ফরাসী ওয়াইন যেমন বিখ্যাত, তেমনি বিখ্যাত ফরাসী চীজ – আবার কোন কোন বিশেষ চীজের সঙ্গে বিশেষ ধরণের ওয়াইন পান করাও সমান বাধ্যতামূলক। ফ্রান্সের অনেক গ্রামে চীজ ট্যুরিজমও আছে – কি ভাবে ফরাসীরা চীজ তৈরি করে, চোখের সামনে দেখা যায়।

অনেক ফরাসী বন্ধুর বাড়ীতে খাবারের নিমন্ত্রণে গেলে চীজের ফাঁদে পড়তেই হয়েছে। খাবারের শেষে ফরাসীরা সাধারণত – ফরাসী ব্রেড, মানে বাগেতের টুকরোর সঙ্গে চীজ পরিবেশন করে, আর সঙ্গে দেয় ওয়াইন। চীজ কাটার বিশেষ ছুরি দিয়ে এক টুকরো চীজ কেটে নিয়ে, মুখে দিয়ে এক চুমুক ওয়াইন পান করলে ওয়াইনের স্বাদ নাকি আরও বেড়ে যায়। বছরের নানা সময়ে নানা ধরণের চীজ খাওয়ার নানান ফরাসী সূত্র আছে – মনে হয় শুধু ফরাসীরাই সেই সূত্রের খবর রাখে।

ফরাসী চীজ তো সাধারণত সাদা, হালকা কমলা ও ঘিয়ে রঙেরই হয়, কিন্তু, গরুর দুধ থেকে তৈরি এক ধরণের সবুজ ছত্রাক যুক্ত চীজের প্রেমে ফরাসীরা মাতোয়ারা – Roquefort চীজ, বেশ এক ছত্রাকময় গন্ধের চীজটি খেতে কিন্তু মন্দ লাগে না। স্যালাডের উপরে ছড়িয়ে দিয়ে বা শুধু ব্রেড ও ওয়াইনের সঙ্গে পরিবেশন করে এই চীজ।

ফ্রান্সের প্রত্যেকটা এলাকার এক একটি নিজস্ব চীজ আছে, আবার নানা জায়গার নানা ধরণের ফরাসী চীজের নানান নাম। গরু, ভেড়া ও ছাগলের দুধ থেকে তৈরি নানা প্রজাতির প্রত্যেকটা ফরাসী চীজের আবার স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। তাই, ফ্রান্সে কিছুদিন বসবাস করলে কিছুদিনের মধ্যেই নানান ফরাসী চীজের স্বাদে, রসনায় ডুবে যায় সবাই।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Western-Europe and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান