মালাগার মুরিশ প্রাসাদে (Alcazaba of Malaga, Spain)

মেডিটেরিয়ানের পাশে দক্ষিণ স্পেনের Costa del Sol  বা Coast of the Sun অঞ্চলের সমস্ত শহর গুলো টুরিস্টদের কাছে যেন এক মুক্তোর হার। আর মালাগা যেন সেই মুক্তো হারের এক দামী মণি কিংবা এই শহরকে বলা যায় আন্দালুসিয়ার রানী। মধ্যযুগীয় রোমান, মুরিশ, আরব ইতিহাস, স্পেনের নবজাগরণের ইতিহাস, সমুদ্রের তীর, নোনা হাওয়া, খাওয়া দাওয়া, জীবন যাপন – সব মিলিয়ে এই শহর প্রতি বছর গরমের সময় কতো যে আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় টুরিস্টের অস্থায়ী আস্থানা হয়, তার হিসাব কে রাখে।

জুনে এখানে খুব তাড়াতাড়ি সকাল হয়, তাই ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই এই শহরের ছন্দ, ইতিহাস, বর্তমান সব কিছুকে দেখে নিতে বেরিয়ে পড়েছিলাম।  এই শহরে একই সঙ্গে রোমান ও মুরিশ ধ্বংসাবশেষ বা ইতিহাসের নিদর্শনকে পাশাপাশি দেখা যায়। তাই মালাগা এসে আলকাজাবায় একবার আসতেই হয়, উজ্জ্বল এক দিনের সূচনা হয় Gibralfaro পাহাড়ের নীচে আলকাজাবা দুর্গ থেকে। অবশ্য আলকাজাবা মানেই প্রাচীর ঘেরা দুর্গ শহর।

হোক না এই জায়গা স্পেনের মুরিশ ইতিহাসের সাক্ষ্য, কিন্তু মালাগার আলকাজাবায় ঢোকার মুখেই 1st century BC র তৈরি ঐতিহাসিক ভগ্ন রোমান থিয়েটার স্বাগত জানায়। এখনো এখানে খনন করে আরও প্রচুর রোমান সভ্যতার নিদর্শন খোঁজার পালা চলছে, ও অনেক অংশেই সংরক্ষণের কাজ চলছে। সকালের কাঁচা আলো পড়ে এই ভগ্ন রোমান থিয়েটার ও আলকাজাবার যেন এক অপূর্ব ঐতিহাসিক রূপ তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের কোলে একাদশ শতাব্দীর প্রাক্বালে Hammudid   রাজবংশের এই আলকাজাবা বা দুর্গ তৈরির জন্যে রোমান সভ্যতার অনেক জিনিসই নাকি ব্যবহৃত হয়েছিল।

পাহাড়ের ঢালে উঁচু জায়গায় শহরের দিকে মুখ করে, শহরের মধ্যেই এই দুর্গ দূর থেকে দেখতে যতই পাষাণ, রুক্ষ, সুরক্ষিত কবচ বলে মনে হোক না কেন – ভেতরে ফোয়ারইয়র জল, বাগান, ফুল, কমলা লেবুর গাছ, সব মিলিয়ে বেশ এক মনোরম পরিবেশ, যেন এক মরুদ্যান।

দুর্গের সুরক্ষা প্রাচীরের উপর থেকে দেখা যায় মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের উদার দৃশ্য। সমুদ্রের ফুরফুরে হাওয়ায় জুনের গরম এখানে বিন্দুমাত্র অনুভূত হয় না। ভেতরে এক মিউজিয়ামে সাজানো আছে স্পেনের মুরিশ ইতিহাসের নানান নিদর্শন, দুর্গের সম্পূর্ণ এক মডেল দেখে আন্দাজ করে নেওয়া যায় – কি বিশাল এক দুর্গ শহরে এসে পড়েছি।

দুর্গের ভেতরের বিশাল অঞ্চলের পাহাড়ি ঢালু পাথুরে পথে চলতে চলতে ক্লান্ত হলে জিরিয়ে নেওয়া যায় দুর্গের বাগানের গাছের ছায়ায় বা ফোয়ারার পাশে বসে। কয়েকশো বছরের পুরনো, অথচ দুর্গের থামে, দরজার উপরের সুক্ষ কারুকাজ এখনো কেমন সুন্দর – সময়ের ছাপ যেন এক্কেবারেই পড়ে নি।

দুর্গের উঁচু দেওয়ালের উপর থেকে আধুনিক প্রসারিত মালাগা শহর ও সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে অনেকেই দেওয়ালের উপরের ঝুঁকে দাঁড়ায় – দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা যে কি দ্রুত ঘোরে, বিন্দুমাত্র আঁচ পাই না। সূর্য তখন মধ্য আকাশে – উত্তাপ ঢালছে, কিন্তু, দুর্গের ভেতরে বেশ এক ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব।

এখানে এসে ইতিহাসের সাল – তারিখ, যুদ্ধ – বিগ্রহ, জয় – পরাজয়ের ভারে মন ভারী হয় না, বরং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোলে, সামুদ্রিক হাওয়ায় তখনকার রাজা মহারাজের উদার প্রসারিত জীবন যাপনের ঝলক দেখে আশ্চর্য হতে হয়। এখনো যেন এই ভগ্ন দুর্গের ভেতরের আবছায়াময় আনাচ কানাচে, পাথরে বাঁধানো গলির মোড়ে বহু অজানা ঐতিহাসিক কাহিনী, বহু রহস্য থমকে আছে।

 

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Southern-Europe, Spain, Travel and tagged , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s