শীতের দুপুরে এই শহরের মধ্য যুগীয় পাথুরে গলির মোড়ে হয়তো বা থমকে থাকে বহু পুরনো দিনের এক টুকরো স্মৃতি। কত শত বর্ষ পেড়িয়ে যায় কিন্তু বদলায় না এই পুরনো শহরের গলির চরিত্র বা স্থাপত্য – তেরো শতাব্দীর সেই শুরুর দিন থেকে সব কিছু যেন একই রয়ে গেছে। শুধু যুগের সঙ্গে বদলে গেছে দু’পাশের দোকানে জিনিসের বেচাকেনার ধরণ, মানুষের আসা যাওয়া।
এই Gamla stan ও এর গলি থেকেই স্টকহোম শহরের জন্ম হয়েছিল, আর ‘stan’ মানে শহর। স্টকহোম শহরটি ছোট ছোট অনেক দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে, আর দ্বীপ গুলো সেতু দিয়ে যুক্ত। এই শহরের পথে হাঁটতে হাঁটতে সেতু পেড়িয়ে কখন যে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে পৌঁছে যাই বোঝাও যায় না। আর এই অঞ্চল Stadsholmen দ্বীপের এক শহুরে ব্যস্ত অঞ্চল। অবশ্য পরে অন্য দ্বীপও এই Gamla stan এলাকার মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে।
এখানে দু’ধারে স্থাপত্যে, পাথুরে গলি সবই যেন স্টকহোমের পুরনো ও আধুনিক জীবন যাপনের চিহ্ন বহন করে। হ্যালুইনের মরশুমে এই অঞ্চলের বাতাসে ভাসছে ছোট্ট এক ছুটি কাটানোর মেজাজ, পাশের দোকানে সাজানো কুমড়োরা দাঁত বের করে হাসছে। এই Gamla stan অঞ্চলের সব রাস্তারা গিয়ে মিশেছে প্রধান এক স্কোয়ারে – Stortorget স্কোয়ার। এখানেই আছে স্টকহোম ক্যাথিড্রাল, রাজ প্রাসাদ। আবার, এখানেই আছে স্টকহোমের বিখ্যাত আকর্ষণ – নোবেল মিউজিয়াম।
শীতের দুপুরে খুব তাড়াতাড়িই সরু গলির মোড়ে আঁধার নামে, সঙ্গে নামে জাঁকালো ঠাণ্ডা। দু’পাশের দোকানে জ্বলে ওঠে রকমারি আলোর সজ্জা। স্যুভেনির, কফি শপ, রেস্টুরেন্ট, চকোলেট, ঘর সাজানোর জিনিস, বড় ব্র্যান্ডের জিনিস – কি নেই এখানে। এখানে সরু পাথুরে বাঁধানো, প্রচণ্ড পরিষ্কার মধ্য যুগীয় গলি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নানা ধরণের মানুষ ও তাঁদের ব্যস্ততা, ছুটি কাটানোর ধরণ দেখা যে স্টকহোম বেড়ানোরই এক অঙ্গ। এক একটা সরু গলি, দূরে গিয়ে মিশে যায় কিংবা হাঁটতে হাঁটতে গলির মুখ থেকে যখন দেখি শেষে কোন এক চার্চ বা পুরনো স্থাপত্যের চূড়া – যেন হাতছানি দেয়। ইচ্ছে জাগে সেই দিকেই হেঁটে যেতে, দেখতে ইচ্ছে করে এই পথের শেষ কোথায়, কি আছে শেষে।