পোর্তো থেকে ট্রেনে চেপে যখন পিনহাওয়ের ওয়াইন ভ্যালির দিকে যাত্রা শুরু করলাম, আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলল দুরো নদী ও অপূর্ব পাহাড়ি দৃশ্য। অবশ্য পোর্তো থেকে পিনহাওয়ের দিকে কিছুটা পথ দুরো নদী ধরে নৌকো দিয়েও যাওয়া যায়। যাইহোক, চলার পথে কখনো কখনো দুরো নদী পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে গেলেও আবার এসে সঙ্গ নিয়ে নিল।
এক অদ্ভুত জায়গা এই দুরো নদীর ভ্যালি। ট্রেনের যাত্রা শুরু করার পরে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দু’পাশের দৃশ্যপট বদলে যায়। কিছু দূর চলার পরেই পাহাড়ের গায়ে গায়ে ঢালু আঙুর ক্ষেতের দৃশ্য শুরু হয়ে যায় – পর্তুগালের বিখ্যাত ওয়াইন ভ্যালি। সবুজ পাহাড়, সোনালি হলুদ রোদের লুটিয়ে পড়া, দুরো নদীর নিশ্চিন্ত বয়ে চলা – সব মিলিয়ে সে যেন কোন এক অন্য জগত।
দুরো ভ্যালির এই অঞ্চলের বিশেষ স্থানীয় আবহাওয়া নাকি অলিভ, কাঠবাদাম ও আঙুর চাষের জন্যে উপযুক্ত। তবে গত কয়েক শতাব্দী ধরে দুরো ভ্যলিতে আঙুর চাষই হয়ে এসেছে – আঙুর চাষ এই অঞ্চলের অর্থনীতির এক স্তম্ভ। আর দুরো ভ্যালির অদ্ভুত আবহাওয়াও প্রকৃতির এক আশ্চর্য রহস্য, এখানেই সবচেয়ে ভালো আঙুর চাষ হতে পারে।
শুনেছি, দুরো নদীর বুক ছুঁয়ে কুয়াশা ও জলবাষ্প মেশানো এক মিষ্টি উষ্ণ আদ্র বাতাস পাহাড়ের উপত্যকায় আটকে থাকে, ধীরে ধীরে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠে সেই উষ্ণ বাতাস পাহাড়ের গায়ে ঢালু আঙুর ক্ষেতে ছড়িয়ে যায়, আর সেই উষ্ণ বাতাস ও সামারের উষ্ণ সোনালি রোদ পোর্ট ওয়াইনের জন্যে বিশেষ ধরণের আঙুরের জন্যে একদম যথার্থ।
আর বছরের, যে কয়েক মাস আঙুর ক্ষেতে রোদ পড়ে, তাতেই নাকি পোর্ট ওয়াইনের কোয়ালিটি নির্ধারণ হয়। আর দুরো ভ্যালির এই অঞ্চলে পোর্ট ওয়াইনের সমস্ত বড় বড় কোম্পানির বাগান, মাঝে মাঝেই তাই সবুজ আঙুর ক্ষেতের মধ্যে তাদের সাইনবোর্ড উঁকি মারে।
প্রাচীন কালে দুরো ভ্যালির পিনহাওয়ে যত ওয়াইন তৈরি হোতো, তা দুরো নদী পথে বিশেষ ধরণের নৌকোয় কাঠের পিপেতে করে পোর্ত শহরের ওয়াইন সেলার গুলোয় নিয়ে যাওয়া হোতো। কিন্তু, দুরো নদীর জল নিয়ন্ত্রণ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে যখন নদীর বুকে পনেরোটা ড্যাম তৈরি হয়ে গেল, আর সেই পথে নৌকো ও ছোট জাহাজ চলাচল কমে গেল, এখন পোর্ট ওয়াইন ট্যাংকারে করে সরবরাহ করা হয়।
যাইহোক, প্রায় নয়শো কিলোমিটারের কাছাকাছি দীর্ঘ এই দুরো নদী, স্পেন ও পর্তুগালের নানা শহর, গ্রাম, পাহাড় ছুঁয়ে বয়ে চলেছে, কখনো কখনো আবার দুরো নদী দুই দেশের সীমানাও নির্ধারণ করেছে। আর এই নদীর বুকে গড়ে ওঠা পনেরোটি ড্যাম দুই দেশের মধ্যেই ভাগাভাগি করে অবস্থান করে।
প্রত্যেক নদীর সঙ্গে এক সাগরের নাম জুড়ে থাকে, দুরো নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্র। দুরো নদী, পরতো শহরের কাছেই ‘ Foz do Douro’ য় এসে অ্যাটল্যান্টিকের বিশালতার সঙ্গে মিলেছে।
এক হলুদ দুপুরে দুরো নদীর সঙ্গে চলেছি, দেখেছি এর নির্জন শান্ত রূপ, দেখেছি নদীকে ঘিরে এক প্রাচীন সভ্যতা, দেখেছি হলুদ দুপুরের নরম সোনালি আলোয় ঢালু পাহাড়ের গায়ে আঙুর ক্ষেতের স্নান, নদীকে ঘিরে এক নিবিড় নির্জনতার ছবি দেখেছি, দেখেছি মানুষের সহায়তায় নদী কি ভাবে মানুষকে গড়তে জানে – আর সেই সব দেখাই যে আমাদের ভ্রমণ ছবি, ভ্রমণ স্মৃতি।
Beautiful photos of Oporto!
Thanks for the comment. Yes, Indeed Oporto is very beautiful.
দারুণ…ছবি গুলো দেখে সত্যি মম ভরে গেল… 🙂
ধন্যবাদ। ছবি গুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে আরও ভালো লাগলো…
মন*
🙂