কোপেনহেগেন রেল ষ্টেশনের ঠিক উল্টো দিকে পৃথিবীর দ্বিতীয় পুরাতন amusement park তিভলিতে যখন পৌঁছলাম, সন্ধ্যা হয় হয়। অক্টবরের শুরু, এই সময় এখানে বেশ জাঁকিয়েই ঠাণ্ডা পড়ে। হ্যলুইনের মরশুম চলছে। সারদিন কোপেনহেগেন ঘুরতে ঘুরতে অনেক জায়গাতেই তাই কুমড়ো ভুতের দেখা পেয়েছিলাম। ঐ যেমন সাজায় আর কি – কুমড়ো কেটে ভেতরে মোম জ্বলিয়ে দেয়। কুমড়ো দাঁত বের করে হাসে।
হ্যলুইনের এই সময় থেকে শুরু করে ক্রিসমাস পর্যন্ত, প্রতি সন্ধ্যা থেকে তিভলি বাগান নাকি ডাইনি বুড়ি, দত্য দানব, ভূত প্রেতের দখলে থাকে। সন্ধ্যা হলেই দলে দলে পিশাচ, রক্ত চোষা ড্রাকুলা, কঙ্কাল, ডাইনি, ভুত, পরি – সবই ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় ভুত প্রেত, ডাইনি ,পরি আর রূপকথার নাটক চলে, তারই চরিত্ররা নাটকের পোশাকে ঘোরাফেরা করে গোটা বাগানময়। আধো অন্ধকারে বাগানের পথে হঠাৎ ওদের সম্মুখীন হলে পিলে চমকে ওঠা খুব একটা বিচিত্র নয়। অবশ্য বড় বেশী বাস্তবিক ভুত হীন দুনিয়ায় সাজা ভুত দেখে চমকানোটাও এক মজা।
বাচ্চাদের রূপকথার জগত পুরোপুরি উঠে আসে জীবন্ত হয়ে। বাচ্চারা যত না আনন্দ পায় বয়স্করা দেখি আরও বেশী আনন্দিত এই ভুতুরে পরিবেশে। রীতিমত লাইন দিয়ে টিকিট কেটে বয়স্করা বাচ্চাদের সঙ্গে সঙ্গে এই বাগানের ভুতুরে যজ্ঞে সামিল হয়। সল্প আলোয় সাজানো বাগানের কোণায় কোণায় ভুতুরে ভাব, গা ছমছমে ব্যাপার।
আর কুমড়ো গড়াগড়ি সত্যিকারের কাকে বলে দেখতে হলে এই বাগানে অতি অবশ্যই পা রাখতে হয়। কুইন্টাল কুইন্টাল কুমড়ো বাগানের চারিদিকে ছড়ানো, নানা আকারের কুমড়ো গড়াগড়ি যাচ্ছে। এই বাগান সাজাতে প্রতিবছর নাকি প্রচুর কুমড়োর দরকার হয়। বাগানের পথে চলতে চলতে আলো ছায়ায় খড় দিয়ে সাজানো অনেক হাসিমুখের কুমড়ো ভুতের মুখোমুখি হতে হয়, কোথাও ডাইনির ম্যাজিক স্যুপ তৈরি হচ্ছে, যান্ত্রিক ভুত অদ্ভুত আলো ছায়ায় নড়াচড়া করছে – যেন ভুতের আড্ডায় চলে এসেছি – এক একটি নির্ভেজাল মজা এই বাগানের চারিদিকে।
মোটকথা, সত্যিকারের হ্যালুইনের ভুতুরে পরিবেশ তৈরি করে মানুষকে ভুতুরে আনন্দ দেওয়াই এই ভুতুরে উৎসবের লক্ষ্য। শীতের সন্ধ্যাটি চমৎকার কেটে যায় ডাইনি আর ভুতের নাটক দেখে, কুমড়ো ভুতের কারসাজি দেখে, ডেনিশ গান শুনে, কফি খেয়ে।
Reblogged this on অবাক পৃথিবী (Abak-Prithibi) and commented:
happy halloween day….