লেক জেনেভার সামনে কয়েক পা হাঁটলে, সামনেই দেখা যায় – জেনেভার বিখ্যাত ফুল ঘড়িটি, জেনেভার মানুষের ঘড়ি তৈরির সুদক্ষতার পরিচয় বহন করে চলেছে। এখানে নির্জীব ঘড়ি যেন প্রান পেয়েছে – বছরের নানা সময়ে নানা ফুলের রঙে সেজে ওঠে এই প্রাকৃতিক ফুল ঘড়ি, এ ফুল ঘড়ি প্রকৃতির ছন্দে ছন্দে রং বদলায়। পাঁচ মিটার ব্যসের এই ফুল ঘড়িটিকে ঘিরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফুল গাছ লাগানো হয়। জেনেভায় বসবাসরত ঘড়ির কাজে দক্ষ ও নিপুণ মানুষকে সম্মান জানাতে ও প্রকৃতির অবদানকে মনে রেখে এই ঘড়ি স্থাপিত হয়েছিল।
গতবার যখন এসেছিলাম, ফুলঘড়িকে দেখেছিলাম গোলাপি, হলুদ ফুলের সাজে সেজে উঠতে, সেবার ফুল ঘড়ির সামনে এতো ভিড় ছিল যে সামনে পৌঁছতে রীতিমত লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তের কতো মানুষের ক্যামেরায় যে এই ফুলঘড়িটির ছবি বন্দী হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এবার এসে দেখি, ফুল ঘড়ি নানা রঙের ঘাস ও ফুলের সম্মিলিত সাজে সেজেছে, আর ফুল ঘড়ির সামনে খুব একটা ভিড়ও নেই।
জেনেভার এই ফুল ঘড়িটি শুধু যে সুন্দর ফুলের সাজে সেজে শুধুই শোভা বর্ধন করে তা নয় – সুইস দক্ষতার পরিচয়, এই ফুল ঘড়ি নিখুঁত সময় দেয়, ফুল ঘড়িতে যে সময় দেখা যায় তা স্যাটেলাইট দিয়ে প্রসারিত সময়। তাই, জেনেভায় পথ চলতি অনেকেই এই ঘড়ি দেখে নিজের ঘড়ির সময় মিলিয়ে নেয়। জেনেভা শহরের মধ্যে অবস্থিত এই ফুল ঘড়ির আর কি বিশেষত্ব আছে যা দর্শককে আকর্ষণ করে? এই ফুল ঘড়িটির সেকেন্ডের কাঁটাটি পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সেকেন্ডের কাঁটা – আড়াই মিটার লম্বা!
সময়কে মেপে নেওয়ার ইতিহাসে, যে দেশের নাম সবচেয়ে প্রথমে আসে সেই দেশে এসে একটা বিখ্যাত ঘড়ির দেখা পাবো না, সে তো হতে পারে না! ঘড়ির সুক্ষ যান্ত্রিক কাজ গুলোতে যে দেশের মানুষ সবচেয়ে আগে দক্ষ হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঘড়ির সম্ভার যে দেশে, যে দেশে বেশীর ভাগ মানুষ ঘড়ির কাজে নিপুণ – সেই দেশে তো ঘড়ির কাঁটায় মানুষ নিজের দক্ষতার পরিচয় দেবেই। আর তারা ঘড়ির সমস্ত নির্জীব যন্ত্রপাতিকে প্রান দিতে চেষ্টা করবে, প্রকৃতির নানা রঙে রঙিন করার চেষ্টা করবে – সেটাই তো স্বাভাবিক। তাছাড়া, এই ফুল ঘড়ি যেন যন্ত্র ও প্রকৃতির বন্ধুত্বের প্রতীক।