লেক জেনভার পাশে সুন্দর বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক অদ্ভুত আকারের নিও-গথিক স্থাপত্য নজর কেড়ে নেয়। জেনেভা শহরের মধ্যেই Brunswick এর Duke, Charles d’Este Guelph এর এই সুদৃশ্য সমাধিক্ষেত্রটি জেনেভার অন্যতম এক টুরিস্ট আকর্ষণ।
ভাষাতত্ত্ববিদ, সুরকার ও অশ্বারোহী এই জার্মান জমিদার ইউরোপের নানা শহরে ঘুরেছিলেন। ইতালির ভেরোনা শহরে অবস্থিত, তেরো থেকে চোদ্দ শতাব্দীতে তৈরি Scaliger Tomb দেখে এই খামখেয়ালী জার্মান জমিদারের নিজের সমাধিক্ষেত্রটিকে সেই ভাবেই তৈরি করার ইচ্ছে হয়।
প্যারিসে গিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে শেষ জীবনে তিনি জেনেভায় এসে বসবাস করেন ও মারা যান। জেনেভা শহরকে দিয়ে যান নিজের উপার্জিত বিপুল অর্থ, বিনিময়ে তার শেষ ইচ্ছা ছিল যে – জেনেভা শহরের মধ্যে তার সমাধিক্ষেত্র স্থাপন হয় ও তা যেন শুধু Scaliger Tomb মতোই হয়।
আগে কখনো জেনেভা শহরের মধ্যেই এমনি করে স্মৃতি সমাধিক্ষেত্র তৈরি হয় নি, তাই আপত্তি উঠেছিল জেনেভার নানা মহলে, কিন্তু জেনেভা কতৃপক্ষ Duke এর বিপুল অর্থের বিনিময়ে শেষ কথাটি রেখেছিল – লেক জেনেভার ঠিক উল্টো দিকে, জেনেভা শহরের মধ্যেই Jardin des Alpes এ তার সমাধি স্থান পেয়েছে। এমনকি সমাধির চারিপাশ ঘিরে সুন্দর বাগান ও বসার ব্যবস্থা তৈরি করে দিয়েছিল, ও আজও বহু সযত্নে সেই সমাধি ও বাগান সংরক্ষণ করে চলেছে জেনেভা কতৃপক্ষ।
দেখি, দুপুর রোদে পরিশ্রমী সুইস মালীরা সমাধির পাশে চমৎকার ঘাসের ছবি এঁকে চলেছে, একটা ঘাসও যাতে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠে অপূর্ব সমাধি ও আশপাশের বাগানটির সৌন্দর্য হানি না করে, সেদিকে মালীদের কড়া নজর। মেশিন দিয়ে এক মনে কেটে চলেছে ঘাসের ছবি – রাজহাঁস। অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখে নিচ্ছে ওরা কতো নিখুঁত ভাবে, মনোযোগ দিয়ে কাজ করে চলেছে।
দেখে এলাম – একটা দেশকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখতে, দেশের রাস্তা ঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে কি ভাবে মন দিয়ে নিজের কাজ করে যেতে হয়। প্রকৃতি যেমন করে জেনেভাকে দু’হাত ভরে সৌন্দর্য দিয়েছে, তেমনি জেনেভার মানুষ সেই সৌন্দর্যকে আরও গুছিয়ে রাখতে জানে, যত্ন নিতে জানে, জানে পরিচর্যা করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে সংরক্ষণ করতে।
জেনেভার পথে চলতে চলতে মনে হয়, ওদের প্রতিটি ছোট ছোট কাজে, পরিচ্ছন্ন শহরের রাস্তায় ফুটে ওঠে দেশ ভক্তির ছাপ, দেশকে ওরা সত্যিকারের ভালোবাসে। দেশকে ভালোবাসা মানে তো শুধু শহীদ হওয়া নয়, দেশের প্রতিটি জাতীয় সম্পত্তির প্রতি এক দায়িত্বশীলতা, গর্ববোধ ও তো দেশ ভক্তির আরেক নাম। যেন খুব ছোটবেলা থেকেই ওদের শেখানো হয় দেশ প্রেমের সেই বীজ মন্ত্র, দেশের সম্পত্তির প্রতি যত্নবোধ, ভালোবাসার চেতনা।