এই শহরে রূপকথারা রূপ পায়। রূপ পায় কত স্বপ্ন, কত শিল্প, কত চেতনা। যুগ যুগ ধরে গ্রিক পুরাণের চরিত্ররা পাহারা দেয় এই শহরের প্রধান সেতু – Pont Alexandre III, দিনের শেষে আকাশ যখন রক্তিম রঙে সাজে, কিংবা শহর যখন আঁধার রাতে আলোর মালায় সাজে, এই সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে হতেই পারে এ তো বাস্তব নয় – স্বপ্ন চারণ। তাই তো শিল্পীদের যখনই প্রেরণার প্রয়োজন হয়েছে, দৃশ্যের প্রয়োজন হয়েছে, প্যারিসকেই পাশে পেয়েছে। সে Woody Allen এর Midnight in Paris সিনেমাই হোক বা Adele এর “Someone Like You” মিউজিক ভিডিওই হোক – এই শহর প্রেরণা দিয়েছে, শিল্পকে দিয়েছে প্রশ্রয়।
প্যারিসের সবচেয়ে অলংকৃত, সজ্জিত সেতু Pont Alexandre III, আইফেল টাওয়ার থেকে সোজা হেঁটে Invalides এর বিশাল উদার চত্বর থেকেই দেখা যায় সিয়েন নদীর উপরের এই বিস্তৃত, ব্যস্ত সেতুটিকে। এই সেতুতে যান বাহন চলে, আবার দু’পাশে চওড়া রাস্তা শুধু পথচারীদের জন্যে। মনে হয়, প্যারিসে এসে এই সেতু দিয়ে এক বার না হেঁটে কেউই ফিরে যায় না। তাই, যান বাহন চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে ডিসেম্বরের কণকণে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে প্রচুর টুরিস্টও হেঁটে চলেছে।
সেতুর শুরুতেই উঁচু থামের উপরে পক্ষিরাজ ঘোড়ার সোনালি মূর্তি, গ্রিক পুরাণের পরি cherubs ও nymphs রা আকাশের দিকে হাত বাড়ায় ও খোলা তরবারি উঁচু করে দর্প ঘোষণা করে – ওদের বলা হয় Fames, সিয়েন নদীর বাঁ তীর ও ডান তীর মিলিয়ে মোট আট Fames আছে। এক এক Fames ফ্রান্সের এক এক গর্বের বিষয়কে বর্ণনা করে – Fame of the Sciences, Fame of the Arts ইত্যাদি।
সেতুর মাঝ বরাবর আরেক সজ্জিত মূর্তি Nymph, সিয়েন নদীর জলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকো থেকে এই মূর্তিটিকে আরও ভালো করে দেখা যায়। বিস্তৃত নদীর বুকে এই অপূর্ব Beaux-Arts style এ তৈরি সেতু ও রেলিং এর Art Nouveau স্টাইলের বাতি এক অদ্ভুত রূপকথা ছবি তৈরি করে, আবার সিয়েন নদীর শীতল জলের বুক ছুঁয়ে হু হু ঠাণ্ডা হাওয়া চিরে দিয়ে যায়।
সন্ধ্যায় যখন Pont Alexandre III সেতুর বাতি গুলো জ্বলে ওঠে, এক রূপছায়া পরিবেশ তৈরি হয়, পথের পাশে ল্যাম্পের হলুদ আলোয় জেগে ওঠে রাত প্যারিস। অনেকে ঘরে ফেরে, আবার কেউ কেউ রাতের প্যারিস দেখার জন্যে বেরিয়ে পরে, ডুবে যায় এই শহরের প্রেমে, হেঁটে পার হয় Pont Alexandre III সেতু।