কোন কোন দিন পড়ন্ত হলুদ দুপুরে কাজের ফাঁকে হঠাৎ কোন এক জায়গার এক ঝলক, মানস চক্ষে ভেসে ওঠে। নিজেকে সেদিন লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলিনুসের Three Crosses পাহাড়ের উপরে, এক প্রান্তে আবিষ্কার করি, পুলকিত হই। আশ্চর্য হয়ে ভাবি এই আমি সেদিন ছিলাম সেখানে, সেই দেশের বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম? সেই শহরে সেদিনের উজ্জ্বল হলুদ পড়ন্ত বেলার সাক্ষী ছিলাম? কি অসীম অনিশ্চিত সম্ভাবনায় মোড়া পৃথিবীর পথে মানুষের জীবনের পথ চলা।
ভিলিনুস শহরের এক প্রান্তে বয়ে চলেছে Vilnia নদী, শান্ত ছোট্ট নদীটির পাশেই Three Crosses পাহাড়ের জঙ্গুলে পার্ক এলাকা। দূর থেকেই দেখা যায় পাহাড়ের উপরে সাদা তিনটে ক্রস মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে পাহাড়ি জঙ্গুলে গাছ দিয়ে ঘেরা এই অঞ্চলে বয়স্ক টুরিস্ট বেশ কমই বেড়াতে আসে, হেঁটে পাহাড় চড়া ছাড়া অন্য উপায় নেই বলেই হয়তো। তবে টুরিস্ট বাস কিছুটা উপরে নিয়ে যায়।
ভিলিনুসের ম্যাপ নিয়ে আমরা সেদিন ছিলাম বাল্টিক দেশের সেই শহর আবিষ্কারকের ভূমিকায়, দেখে নিতে চেয়েছিলাম শহরের জীবন ছবি। ভরে নিয়েছিলাম আমার ভ্রমণ ঝুলির সঞ্চয়। এই শহরকে নিজের মতো করে দেখে নিতে নিতে চোখ রেখেছিলাম দূর পাহাড়ের সাদা তিনটে ক্রসের দিকে। জেনে নিয়েছিলাম কোন পথে যেতে হয় ঐ পাহাড়ে। পাহাড়কে ঘিরে এক পিচ রাস্তা চলে গেছে উপরে, আবার ঘন জঙ্গলের মাঝেও সরু খাড়া এক হাঁটা পথ চলে গেছে থ্রি ক্রস পাহাড়ের দিকে।
কথিত আছে এখানে ১৪ শতাব্দীতে আশেপাশের মনেস্টারির এক দল মঙ্ককে শহিদ করা হয়েছিল। সাত জনকে মারা হয়েছিল আর সাত জন সাধুকে কাঠের ক্রসে বেঁধে Neris নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাঁদেরই স্মরণে সতেরো শতকে এই মনুমেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। সোভিয়েত আমলে এই ক্রস সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে আবার নতুন করে স্থাপন করা হয় এই ক্রস। এই পাহাড়কে আরও অন্য নামেও জানে এখানে – Kreivasis Hill মানে কুটিল (crooked) পাহাড় বা Plikasis (bare) Hill নেড়া পাহাড়।
পাহাড়ি জঙ্গুলে পথে উপরে পৌঁছে ভিলিনুস শহরের দৃশ্যে বিস্তৃত হয় মন। ভালো লাগে, পথের ক্লান্তি জুড়োয়। নির্জন এই জায়গায় শুধু পাখির আওয়াজ ছাড়া অন্য কোন আওয়াজ নেই। এই পাহাড়ে শুধু আমরাই। ইউরোপের কোথাও বেড়াতে গিয়ে কোন দ্রষ্টব্য জায়গায় এতো নির্জনতা কখনো পাই নি। সবুজ এই নির্জনতায় সময় বয় অনন্তের দিকে।