July 2012, Porto, Portugal
জুলাইয়ের উজ্জ্বল দিনে, ঘন নীল আকাশের শামিয়ানার নীচে দুরো নদীর তীরে ইউরোপের অন্যতম ঐতিহাসিক পরতো শহরে যখন পৌঁছলাম সূর্য তখন মধ্য গগনে। এই সময় এখানে এক মনোরম আবহাওয়া, উজ্জ্বল রোদ্দুর কিন্তু গরমের তিব্রতা নেই, দুরো নদীর বুক ছুঁয়ে বেশ এক মৃদু মন্দ ঠাণ্ডা হাওয়া পথ চলার ক্লান্তি জুড়িয়ে দেয়।
বেশ এই হই হই ব্যাপার এখানে, এক দিকে দুরো নদীর বুকে নৌকো প্রতিযোগিতা চলছে, জোরে জোরে মাইকে সেই প্রতিযোগিতার এনাউন্স চলছে, প্রচুর মানুষ জমায়েত হয়েছে। পরিবেশে এক উৎসবের আমেজ, সেই আমজে যেন প্রকৃতিও ইন্ধন জুগিয়েছে, অদ্ভুত সুন্দর আবহাওয়া, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।
দুরো নদীর দুই তীর জুড়ে শতাব্দী কাল ধরে গড়ে উঠেছে পর্তুগালের এই দুই শহর, Vila Nova de Gaia ও পরতো (Porto)। আবার, এই পরতো শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্র UNESCO র World Heritage Site এর অন্তর্গত। রোমান, মুরিশ নানা ঐতিহাসিক সময়ের চাদর জড়িয়ে আজকের আধুনিক পরতো প্রচুর টুরিস্ট আকর্ষণ করে, কিন্তু, এই শহর অহেতুক নিজেকে জাহির করে না, পরিবেশে কোথাও কোন দম্ভ নেই।
এখানে দুরো নদীর তীরে পরতো শহরের দক্ষিণে, Dom Luís ব্রিজের ওপারে, Vila Nova de Gaia র দিকে সারি সারি পরতো ওয়াইনের কেভ (cave)। পর্তুগালে তৈরি ওয়াইন, পরতো ওয়াইন পৃথিবী বিখ্যাত, শতাব্দী ধরে পরতো, এই পরতো ওয়াইন রপ্তানি করে চলেছে। এখানে পর্তুগালের বিখ্যাত ওয়াইন পরিবাররা নিজেদের ওয়াইন তৈরি করে, ও কাঠের বড় বড় পিপেতে সংরক্ষণ করে রাখে। নদীর ধারে সুন্দর বাঁধানো রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়ার সময়ে ওয়াইন কেভের প্রতীক সহ পতাকা নজর এড়ায় না। অনেক কেভের সামনে আবার ওয়াইন টেস্টিং জন্যে নিমন্ত্রণ করে।
এখানে নদীর বুকে পুরনো দিনের কিছু নৌকোর উপরে ওয়াইনের পিপে রেখে নানান ওয়াইন কোম্পানিরা বিজ্ঞাপন করে, বেশ সুন্দর এক পুরনো ছবি তৈরি হয়, অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়, ক্যামেরায় চোখ রেখে যেন সময়ের হাত ধরে পিছিয়ে যাই। এই জায়গার চেহারা ওয়াইন কোম্পানির জন্যে নাকি শতাব্দী কাল ধরে একই আছে, প্রাচীন পরিবেশকে ধরে রেখে আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মেলায় এই জায়গা। তাই, এখানে এসে আধুনিক সময়েও ঐতিহাসিক সময়কে অনুভব করা যায়।
ইউরোপে দেখেছি নদীকে কেন্দ্র করে নানা বিনোদন, নানা খেলা ধূলা। এখানে অনেকে নদীর বুকে ওয়াটার স্কি করছে। মোটকথা এখানে খোলামেলা এক উৎসব মুখর ছুটির সময়ের ছবি ফুটে উঠেছে।
অনেকেই নৌকো নিয়ে দুরো নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে জলের রাস্তা দিয়ে পরতো শহরকে দেখছে, কিংবা এমনিতেই জলের বুকে ভাসার আনন্দে ভাসছে। বোধহয়, নদীর স্রোতের মতো বয়ে যাওয়া জীবনের আস্বাদ পেতে মানুষকে নদীর কাছেই ফিরতে হয়।
বিশাল এই পৃথিবীতে কত দেশ, কত রকমের জীবন ধারন তার কতটুকুই বা জানি, বুঝি, দেখি। তবে প্রতিদিনের জীবন যাপন নিয়ে ব্যস্ত থেকেও, এই পৃথিবীতে ‘যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই’।