June 2012, Guimarães, Portugal
পর্তুগালের দক্ষিণের এক ছোট্ট শহর Guimarães এ যখন পৌঁছলাম ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। সিটি সেন্টারের সামনে সবুজ পাহাড় মেঘের আড়ালে, এক সুন্দর চার্চ, ফুল বাগান, শান্ত শহরের দোকান, কাফে, ঐতিহাসিক প্রাসাদ – সব যেন ছবির মতো সাজানো। এমনি বৃষ্টি ভেজা দিনে এখানে ভেজা বাতাসে ভাসে ঘুমের আমেজ। ঐতিহাসিক কেন্দ্রকে ঘিরে এই শহরের জীবনযাত্রা।
পোরতোঁ থেকে বাসে বেশ সকালেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। Guimarães শহরে ঢোকার মুখেই ক্যাসলের উঁচু দেওয়ালে বড় করে লেখা ‘Aqui nasceu Portugal’ মানে Portugal was born here। নিজের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রেখে আধুনিক প্রজন্মের কাছে পরিবেশন করতে ইউরোপের জুড়ি মেলে না, এই শহরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এবছর এই শহর European Capital of Culture 2012 এর স্বীকৃতি পেয়েছে তাই এই ছোট্ট শহরে টুরিস্টের ঢল নেমেছে।
পর্তুগালের প্রথম রাজা Afonso Henriques এই অঞ্চল থেকেই নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল ও তাঁর প্রাসাদ পর্তুগালের প্রথম পর্তুগীজ প্রাসাদ যেখান থেকে পর্তুগালের মুরিশ অধিকৃত জায়গা একে একে জয় করে নেওয়া হয়। তাই ঐতিহাসিক দিক দিয়ে পর্তুগালের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর এই Guimarães। পর্তুগাল তাঁর আগে মুরিশ (Moors) সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। পর্তুগালে মুরিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রথম পর্তুগীজ সাম্রাজ্য স্থাপনের পিছনে Afonso র অবদানকে আজও পর্তুগালের মানুষ স্মরণ করে ।
ছেলেবেলায় ইতিহাস বিষয়টিকে খুবই অবহেলা করেছি কিন্তু এখানে দেখছি ইতিহাস থেকে বর্তমানে বাঁচার শিক্ষা পায় মানুষ, আবার ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই জীবিকা খুঁজে নেয়। এখানে সর্বত্রই ইতিহাসের ছোঁয়া, এবং UNESCO এই শহরের ঐতিহাসিকতা বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব নিয়েছে।
পর্তুগালে মুরিশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য প্রাসাদ দেখার পরে Afonso Henriques এর প্রাসাদ খুবই সাধামাঠা ঠেকবে, দেওয়ালে বা থামে অহেতুক কারুকার্যের বাহুল্য নেই, প্রাচুর্য নেই। খুবই সাধারণ এক প্রাসাদ, দেখেই মনে হয় Afonso Henriques অযথা প্রাসাদের সৌন্দর্যের দিকে সময় এবং অর্থ নষ্ট না করে রাজ্য বিস্তারের কাজে ব্যস্ত ছিল।
বৃষ্টি ভেজা দিনে এমনি এক ঐতিহাসিক প্রাসাদের ঘর ও চত্বর আরও বেশী ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে। প্রাসাদ, আকাশ ও দিনের রঙ যেন একই রঙে আঁকা। এই শহরের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হেঁটেই উপভোগ করতে হয়। তাই ছাতা মাথায় নিয়ে সব টুরিস্ট একই দিকে হাঁটছে।
হাঁটতে হাঁটতে এই শহরের কেন্দ্র ‘Olive Square’ এ এসে স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা দিনের মাঝে ক্যাফেতে বসে গরম পর্তুগীজ কফির কাপে চুমুক নিমেষে তরতাজা করে। ‘Olive Square’ এর পাশে চার্চ ‘Olive Church’ ও এক অদ্ভুত স্থাপত্য Praça da oliveira সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
যে কোন জায়গায় বেড়াতে এসে বৃষ্টির দিন খুব একটা সুখ প্রদ অভিজ্ঞতা না হলেও পর্তুগালের এই ছোট্ট নির্জন ঐতিহাসিক শহরটির সঙ্গে বৃষ্টির দিনের ধুসর রঙটি যেন খুবই মানিয়েছে, সঠিক অর্থে এই শহরের ঐতিহাসিক রূপটি ধরা দিয়েছে এমনি বৃষ্টি ভেজা দিনে।