দক্ষিন ফ্রান্সের তুলুসে এই সময় দিন যখন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, আকাশ নির্মেঘ নীল হয়ে যায়, তাপমাত্রা বেড়ে যায়, জড় শীতে বহুদিন মাটির নীচে মুখ লুকিয়ে থাকা ড্যাফোডিলসরা মাথা তুলে সবুজ মাঠ হলুদ করে তুলতে শুরু করে, নানা রঙের টিউলিপের বাল্ব গুলো ফোঁটার প্রস্তুতি নেয় – বাতাস বলে বসন্ত এসেছে, হাসি মুখে ফ্রেঞ্চরা বলে ‘le printemps est arrivé’। বসন্তকে ঘিরে প্রকৃতিরই যখন এতো উন্মাদনা এমনি সময়ে ছুটির দিনে ঘরে থাকতে আর মন লাগে না।
তাই, পাহাড় না সমুদ্র, সমুদ্র না পাহাড় ভাবতে ভাবতে সমুদ্রকেই বেছে নিলাম। তুলুস থেকে ট্রেনে মাত্র পৌনে তিন ঘণ্টার দূরত্বে Arcachon এর অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্রতট। মাঝে Bordeaux তে নেমে ট্রেন বদল করে আরকাসোন শহরে পৌঁছে গেলাম। পুরনো দিনের আদলে তৈরি এই শহরের বাড়ী – পরিবেশে এক আভিজাত্যের ছাপ। এখানে দেখেছি যে কোন সৈকত শহরের বাতাসে এক নোনা ভাব থাকে, শহরে পা রাখলেই বোঝা যায় সমুদ্রের উপস্থিতি। রাস্তায় সুন্দর সাইনবোর্ডে সমুদ্রের দিগ্ নির্দেশ আঁকা, সেই দেখে আমাদের হাঁটা শুরু হল।
আরকাসোন সমুদ্র তীর থেকে দূরে দেখা যায় একচিলতে স্থলভূমির রেখা -Cap Ferret। আরকাসনে এসে Cap Ferret না গিয়ে ফিরে যাওয়া যায় না, তাই ফেরী নিয়ে Cap Ferret পৌঁছে যাই। বালির তটের উপরে এক ট্রেন লাইন চলে গেছে। দুপুর রোদের গরমে বালির উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্রের কাছে পৌঁছতে না চাইলে সেই টয় ট্রেনে চেপে বসতে কোন আপত্তি নেই। দুই ধারে সুন্দর বাড়ী ঘরের মাঝে রেল লাইন ধরে এঁকে বেঁকে চলতে চলতে টয় ট্রেন পৌঁছে দেয় সমুদ্রের কাছে।
আরকাসন শহর ও Cap Ferret শুধু সমুদ্রের উপস্থিতি নিয়েই যে বিখ্যাত তা নয়, সামুদ্রিক – ওয়েস্টার এই অঞ্চলের বিখ্যাত খাবার। সমুদ্রের তীরে সারি সারি কাঠের থামে ওয়েস্টার চাষ চলছে। সমুদ্র তীরে সারি সারি রেস্টুরেন্টে প্রধান মেনুই সামুদ্রিক মাছ।
শুধুই সমুদ্র ও সামুদ্রিক খাবারের টানেই ভ্রমণ পিয়াসী মানুষ Cap Ferret বা আরকাসনে আসে না। Cap Ferret থেকে দূরে এক বালির পাহাড় নজরে পড়ে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় sand dune নাম ‘Dune of Pilat’ । এবার আমাদের উদ্দ্যেশ্য Dune of Pilat।
পৃথিবীর দুরন্ত গতিবেগকে উপেক্ষা করে কি নিশ্চিন্ত, শান্ত ধীর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে ছন্দ বদ্ধ জীবনযাত্রা এখানের মানুষের। নিজেদের সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচিয়ে রেখে কি ভাবে পৃথিবীর নজর নিজের দিকে ফেরানো যায় তা যে খুব ভালো ভাবে জানে দক্ষিণ ফ্রান্সের মানুষ।