হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে এসে মনে হল, পূর্ব ইউরোপের এই শহর ইউরোপিয়ান অন্যান্য বিখ্যাত শহরের চেয়ে কোন অংশে কম নয়, সত্যি এই শহর ‘Paris of East’। সেপ্টেম্বরের এই সময়ে উপছে পড়া টুরিস্টের ভিড় নেই, রাস্তা ঘাট অসম্ভব পরিষ্কার।
সমতলের পেস্ট ও পাহাড়ের উপরের বুদার মাঝে বয়ে চলেছে উদার, বিস্তৃত দানিয়ুব। বলা যায় দানিয়ুব এই শহরকে দুই অংশে ভাগ করেছে, পশ্চিম অংশে বুদা – এই শহরের ঐতিহাসিক অংশ, পূর্ব অংশে পেস্ট – তুলনামূলক ভাবে আধুনিক অংশ। দুই অংশকে জুড়েছে চেন ব্রিজ– চারটে সিংহের মূর্তি এই ব্রিজকে সদা পাহারা দিচ্ছে। রাতে যখন আমাদের বাস বুদাপেস্ট শহরে ঢুকছিল এই ব্রিজকেই আলোর মালায় সাজতে দেখেছিলাম – অপূর্ব লাগছিল। অবশ্য অন্য অনেক সেতুই এই শহরের দুই অংশকে জুড়েছে, কিন্তু এই চেন ব্রিজ বোধহয় হাঙ্গেরির সবচেয়ে সুন্দরতম ব্রিজ। এই ব্রিজ পেরিয়েই বুদা পাহাড়ের উপরে ক্যাসল হিল থেকে আমাদের বুদাপেস্ট দর্শন শুরু হল।
Neo-gothic ও neo-Romanesque ধাঁচে তৈরি ঐতিহাসিক অংশ বুদার এই ক্যাসল ডিসট্রিক্টের প্রধান আকর্ষণ বুদা ক্যাসল, Royal Palace,Fishermen’s Bastion, Matthias চার্চ। পাহাড়ের উপরে Fishermen’s Bastion থেকে দানিয়ুবের ওপারে Hungarian national parliament buldings ও পেস্টের মনোরম দৃশ্যে মুগ্ধ হতেই হয়। রবিবারে Matthiasচার্চে প্রার্থনা চলে, নির্জন Fishermen’s Bastion এর এলাকা তাই একদল অল্পবয়সী মিশনারিদের দখলে চলে গেল কিছুক্ষনের জন্যে। সকালের কাঁচা সোনা রোদে সাদা পাথরের তৈরি Fishermen’s Bastion চকচকে করে উঠেছে, Matthias চার্চের উপরের রঙিন টাইলস থেকে আলো যেন ঠিকরে পড়ছে। অদ্ভুত সুন্দর এই অংশের স্থ্যাপত্য।
Matthias চার্চ ও Fishermen’s Bastion এর মাঝের বিশাল চত্বরে Stephen I of Hungaryর ঘোড়ায় চড়া মূর্তি যেন রাজত্ব করছে।
এই অঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে ফটো তুলতে তুলতে আমার বুদাপেস্ট ঘোরার তালিকাটি হাত থেকে কোথায় যেন পড়ে গেল। একটুকরো কাগজ, নিশ্চয়ই যেখানে শেষ বার বসেছিলাম সেখানেই হাতছাড়া হয়েছে – ওখানেই হয়তো পড়ে থাকবে। ফিরে গিয়ে দেখি নেই। পরিষ্কারের দল সর্বদা এই চত্তর পরিস্কার করে চলেছে।
আসলে, বুদাপেস্টে আসার আগে বুদাপেস্টের যোগাযোগ ব্যাবস্থা, বুদাপেস্ট সম্বন্ধে অনেকটাই পড়াশোনা করে লিখে নিয়ে এসেছিলাম, কারণ বুদাপেস্টের মেট্রো, বাস ইত্যাদি বেশ প্রহেলিকাময়।যেমন, সকালে বাসে কোন টিকিট চাইল না, এমনকি বাসে টিকিট দেখানোর কোন ব্যবস্থাই নেই। আবার শুনেছি, অনেকবার অনেক টুরিস্টদের মেট্রোর টিকিট কেটেও প্রচুর ‘Forint’ হাঙ্গেরিয়ান টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। সাধারণত অন্যান্য জায়গার মেট্রোতে ঢোকার আগে এক কাঁচের দরজায় টিকিট পাঞ্চ করে তবে ঢুকতে হয় মেট্রো চত্বরে। কিন্তু, হাঙ্গেরিয়ান মেট্রো খোলা, শুধু দুই কোণে দুই থামে টিকিট পাঞ্চের ব্যাবস্থা থাকে – টুরিস্টদের সে কথা জানার নয়। বিনা বাধায় টিকিট পাঞ্চ না করেই এখানে মেট্রো চড়া যায়, তাই মেট্রোর ভেতরে মেট্রো চলাকালীন দল বেঁধে টিকিট চেকার টিকিট চেক করে। টিকিট কাটা থাকলেও পাঞ্চ না করলে প্রচুর জরিমানা – প্রায় একশো ইউরোর কাছাকাছি। টুরিস্ট বলে কোন ছাড় নেই। তাই আমরা খুবই সতর্ক ছিলাম, মেট্রো চড়ার আগেই খুঁজে পেতে সেই থামে টিকিট পাঞ্চ করে তবেই ঢুকতাম। মেট্রোর ভেতরে আবার দু’ এক দফা টিকিট চেকারের দল হানা দিয়েছিল।
যাইহোক, বুদার ক্যাসল হিলে অনেকক্ষণ থেকে পেস্ট অঞ্চলকে জানতে, এবার নিচের চেন ব্রিজের উদ্দ্যেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম।