তুলুসের সাইকেল দিন (Velo Toulouse, France)

Toulouse, France 2013

তুলুসে এসে আমার ছেলেবেলার সাইকেল দিনের স্মৃতি ফিরে এলো। ছেলেবেলায় বাবার কিনে দেওয়া সাইকেল নিয়ে গরমের ছুটির সময় সারা দিন সাইকেল চালানো শিখতাম, পুরোপুরি শিখে যাওয়ার পরে তো আর আমায় পায় কে। সাইকেল ছিল সর্বক্ষণের সঙ্গী। কতো বার যে সাইকেল এক্সিডেন্ট হয়েছে মনে নেই। তারপর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানান জায়গা বদলে সাইকেল স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল, এক গতিময় পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিলাম।

তুলুসে এসে দেখি জায়গায় জায়গায় সাইকেল স্ট্যান্ড, মানে তুলুস কর্তৃপক্ষ থেকে তুলুসের নানান জায়গায় প্রায় ২৫০ টা VélôToulouse – self-service bike system তৈরি করে দিয়েছে। এই স্ট্যান্ড গুলো থেকে চব্বিশ ঘণ্টা, সারা বছরই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। সারা তুলুসের নানান মোড়ে প্রায় ২৫০০ টা সাইকেল রাখা আছে। শহরের যান জট এড়াতে অনেক ভদ্রলোকেরা এখানে সাইকেল ভাড়া নিয়ে অফিস যায়। শীতের সকালে কোট বুট প্যান্ট পড়ে সাইকেল চালিয়ে দিব্যি অফিস পৌঁছে যায় অনেক ফ্রেঞ্চ । বলে, অফিস আসার পথে একটু এক্সারসাইজ হয়ে গেল। সত্যি, ছিপছিপে চেহারার ফ্রেঞ্চ ভদ্রলোকেরা প্রচণ্ড স্বাস্থ্য সচেতন।

তবে শহরের মধ্যে অন্যান্য গতিময় গাড়ির ভিড়ে সাইকেল চালানোর জন্যে তুলুস কর্তৃপক্ষও নজর দেয়। শহরের সমস্ত রাস্তায় সাইকেল চালানোর জন্যে আলাদা এক জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেখছি এই পরিবেশ দূষণ মুক্ত নিরীহ যান – সাইকেল চালানোয় উৎসাহ দেওয়ার জন্যে আরও রাস্তাকে সাইকেল উপযুক্ত করে তুলছে কর্তৃপক্ষ। এখন তুলুস ও তার আশপাশের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল চালানোর জন্যে উপযুক্ত। আসলে ইউরোপে সমস্ত কিছুই এতো নিয়ম মেনে চলে যে গাড়ির রাস্তায় সাইকেল চালানো সহজ নয়। তাই সরকারের কড়া নজর সমস্ত দিকে।

আমাদের দেশের মতো একই রাস্তায় সাইকেল, বাইক, স্কুটার, গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, রিক্সা, অটো, বাস, ট্রাক, গরু হাঁটা, মানুষ হাঁটা সবই করতে হলে এই দেশের মানুষ বোধহয় পাগলই হয়ে যাবে। যাইহোক, আমাদের দেশের সঙ্গে এদের তুলনা চলে না, আমাদের দেশের মডেল হল – সমবেত উন্নয়ন। আর সেই সমবেত উন্নয়নে প্রচুর ফাঁক ফোঁকর থাকতেই পারে। সেটা মেনে নিয়েই আমাদের প্রজন্ম কেটে যাবে। তবে, এখানেও দেখেছি কিছু মানুষ নিয়ম ভাঙ্গতে বেশ ভালোই বাসে।

যাইহোক, এখানে ছুটির দিনে সাইকেল নিয়ে ক্যানাল দু মিদি ধরে বহুদূর চলে যাই। এখানে গরমের দিন সবারই বড় প্রিয়, জুলাই-অগাস্টে গরমের ছুটিতে সবাই বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। শীতের পরেই রোদ্র উজ্জ্বল দিনে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেতের মধ্যে সাইকেল নিয়ে যখন যাই কিংবা ছুটির দুপুরে গারোন নদীর ধারে বা এই গোলাপি শহরের আনাচে কানাচে যখন সাইকেল চালাই, যেন ফিরে পাই ছেলেবেলার সেই সব দামাল দিনের ছোঁয়া, কানের পাশ দিয়ে উদাসী হাওয়া যেন বলে যায় – পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক, সবারই জীবন সুখে সরল হয়ে উঠুক।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান