Toulouse, France
তুলুসের খাওয়া দাওয়ার কথা বলতে গেলে মেডিটেরিয়ানের প্রভাব পড়বেই। বছরের নানা সময়ে এখানের তাজা সব্জির বাজারে নানা রঙের বাহার দেখা যায়। আর মাছের বাজারে মেদিটেরিয়ান সমুদ্র যেন উঠে আসে সমস্ত ধরণের সামুদ্রিক খাবারের ভাণ্ডার নিয়ে।
অনেকদিন এখানে থেকে আমাদের খাবার অভ্যাসেও যেন এই জায়গার প্রভাব পড়েছে। গরমকালের প্রায় দিনের খাদ্য বলতে স্যালাড – নিশোয়াস, এক রামধনু রঙের স্যালাড। কাঁচা টোম্যাটো, সবুজ বিন, গাজর, আলু, ডিম, ব্রকলি সেদ্ধ, টুনা মাছের ছোট টুকরো, ল্যাটুস ইত্যাদি দিয়ে সাজানো স্যালাডের প্লেট। মানে, গরমকালে তাজা সবজি বাজারে যা যা পাওয়া যায় তাই দিয়েই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর এক প্ল্যাট স্যালাড আর দু’পিস ফ্রেঞ্চ বাগেতে অনায়াসে লাঞ্চ হয়ে যায়। আর সঙ্গে থাকে এক কৌটো মিষ্টি দৈ। এখানে কৌটো ভরে দৈ বিক্রির ব্যাপারটা বেশ ভালো।
গরমের শুরুতে অল্প শীত শীত আবহাওয়ায়, মার্চ এপ্রিলে কচি সবুজ নমনীয় কমনীয় খুব সুন্দর এস্পারাগাসে বাজার ছেয়ে যায়। প্রথম দিকে এস্পারাগাস, ব্রকলি ইত্যাদি সব্জির প্রতি আমাদের খুব একটা আকর্ষণ ছিল না। কিন্তু, বাজারে নতুন ওঠা সবজি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। রান্নাঘর তো আমার গবেষণাগার তাই বাজারের এস্পারাগাসের সদব্যাবহার হয় নানা ভাবে।
একটু অলিভ ওয়েলে হালকা করে ভেজে নিয়ে ওপরে একটু চীজ ছড়িয়ে দিয়ে কি অপূর্ব খেতে লাগে। এস্পারাগাসের একটা বৈশিষ্ট্য হল একে খুব বেশী সেদ্ধ করতে নেই, একটু কচকচে ভাব এর স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়। আবার কখনো বা একটু রসুন কুচি অলিভ ওয়েলে ফোঁড়ন দিয়ে এস্পারাগাস ভাজা – স্বাদে অতুলনীয়। সঙ্গে আবার একটু চিকেন কুচি দিয়ে চিকেন এস্পারাগাস বলা যেতে পারে। তাছাড়া, এস্পারাগাস স্যুপ – একটু বাটার, পেঁয়াজ আর এস্পারাগাস স্যতে করে নিয়ে মিক্সিতে পিষে নিয়ে অপূর্ব সবুজ এক বাটি স্যুপে ডিনার শুরু করা যায়। তাজা সবজির সুযোগ নেওয়া আর কি। শুনেছি এস্পারাগাস নাকি স্মৃতি শক্তি বাড়ায়।
আরও অনেক নজর কাড়া সবজি নজর কাড়বেই বাজারে। লাল, সবুজ, হলুদ এই তিন রঙের ক্যাপ্সিকাম তো সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লাল ক্যাপ্সিকামকে যে কত রকম ভাবে রান্না করা যায়! যেমন গন্ধ তেমনি মিষ্টি স্বাদ। ঝিরি ঝিরি করে কেটে, অলিভ ওয়েলে রসুন ফোঁড়ন দিয়ে লাল ক্যাপ্সিকাম ভাজা, আর নামানোর ঠিক আগে বেসিল পাতা দিয়ে গারনিশ – কি যে অপূর্ব।
আরেক অদ্ভুত সবজি আমাকে কৌতূহলী করেছিল- artichoke। কিন্তু, মোহিত করে নি। তাজা artichoke সেদ্ধ করে এর হৃদয়টি খেতে হয়। তবে টিনের artichoke কখনো কখনো পিজার উপরে ছড়িয়ে খেতে মন্দ নয়।
তাছাড়া, আমার চেনা সবজি তো বাজার দখল করেই। অবশ্য আভকাদো কে আমি তুলুসেই চিনলাম। শুনেছি আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। ধনে পাতা, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, একটু লেবু রস দিয়ে আভকাদো চাটনি খুবই মুখরোচক।
এতো গেল সবজির কথা, বাঙালির প্রিয় মাছ, ভুলি কি করে। এখানের মাছের সুনাম না করলে যে নিতান্তই অন্যায় হবে। বছরের নানা সময়ে নানান তাজা মাছ বাজার দখল করে। তাজা সারদিন, টুনা, স্যালমন, দুরাদ র্যয়েল, ট্রাউট, ম্যাকারেল এই সব মাছের স্বাদ অতুলনীয়। ফ্রেঞ্চরা নিজেদের রান্না নিয়ে প্রচণ্ড আত্মগর্বী, তাই ছুটির দিনে বাজার করে ওরা বাড়ীতে তরিপদ করে রান্না করে, তাজা খাবার খায়। শুনেছি সেই জন্যে ম্যাক ডোনাল্ড সবচেয়ে শেষে ফ্রান্সে এসেছে।
শুধু যে তুলুসেই মাছের দাপট তা নয়, সমুদ্র তীরের অন্যান্য ইউরোপিয়ান শহরে দেখেছি মাছই প্রধান খাদ্য। সেবার জুনে স্পেনের মালাগায় দেখেছি সমুদ্র তীরে সারি সারি খোলা রেস্তোরাঁ। জুনে প্রচুর সারদিন মাছ ধরা হয় এই অঞ্চলে, প্রতিটি রেস্তোরাঁর বাইরে কয়লার আগুন জ্বালিয়ে সারদিন গ্রিল হচ্ছে। আর সমুদ্র তীর গ্রিল সারদিনের গন্ধে ভরপুর। খিদে না থাকলেও মৎস্যপ্রেমীদের জিভে জল আসতে বাধ্য সেই বাস্তব মাতাল গন্ধে। সারদিন গ্রিলে একটু নুন ও লেবুর রস ছড়িয়ে অপূর্ব আহার। সঙ্গে দেয় লেটুস, পেঁয়াজ আর অলিভ স্যালাদ।
বছরের নানান সময়ে কত রকমের খাদ্য যে তুলুসবাসির দৈনন্দিন জীবন জুড়ে আছে তার ইয়ত্তা নেই। মাছ বাজারে অনেক সময় কুলোর আকারের জ্যান্ত চলন্ত কাঁকড়া দেখে ভয়ই লাগে। বিশালাকার লবস্টার যখন দাঁরা উঁচিয়ে চলাফেরা করে, ওদের শৌর্য দেখে মনেই হয় না মানুষের প্লেটে এরা কতই না নিরীহ হয়ে পড়ে থাকে।
গরমে এখানে প্রচুর oyster পাওয়া যায়। বরফ কুচির উপরে খোলা ছাড়িয়ে জ্যান্ত oyster পরিবেশন করে, খাওয়ার আগে একটু লেবুর রস ছড়িয়ে নিতে হয়। আবার ক্রিসমাসের আগে বাজার ছেয়ে যায় কালো ঝিনুক Mussels এ। এদিকের খাবার দাবার গুলো এতোই আঞ্চলিক এবং এতোই তাজা যে ছোট্ট জায়গাতেই সীমা বদ্ধ, সেই জায়গার সীমা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছয় না। তুলুসের আরও দক্ষিণে অতি জনপ্রিয় খাবার হল Cassoulet, হাঁসের মাংস ও সাদা বিন দিয়ে তৈরি এই খাদ্য দক্ষিণ ফ্রান্সের এক ডেলিকেসি, জমাট শীতে প্রচুর চর্বি যুক্ত এক বাটি ধোঁয়া ওঠা Cassoulet খেলে ঠাণ্ডা অনুভূত হয় না।
হাঁসের কথা বলতে গিয়ে মনে হল, ফুয়াগ্রা (Foie gras)। শেষ নভেম্বরে ক্রিসমাসের আগে এই সময় বাজার ছেয়ে গেছে এই ফুয়াগ্রায়। ফুয়াগ্রা নামটি প্রথমে তুলুসেই শুনলাম। হাঁসকে জোর করে প্রচুর খাইয়ে খাইয়ে হাঁসের লিভারটাকে প্রচুর মোটা করা হয়, আর সেই মোটা চর্বি যুক্ত লিভারকেই বলে ফুয়াগ্রা। ইউরোপের অন্যান্য দেশে এই ফুয়াগ্রা তৈরির বর্বরতার জন্যে এই খাদ্য নিষেধ, কিন্তু ফ্রান্সের এক প্রধান ডেলিকেসি এই ফুয়াগ্রা। ফুয়াগ্রা, ওয়াইন, চীজ না হলে যে ক্রিসমাস হয় না ফরাসীদের।
ও হ্যাঁ, চীজ ও ফ্রান্সের আরেক ডেলিকেসি। কতো রকমের যে চীজ আছে বাজারে, তার হিসাব নেই। প্রতিটি অঞ্চলের এক নিজস্ব চীজ, নিজস্ব স্বাদ, নিজস্ব গন্ধ। তবে সব চীজ যে বাইরের মানুষ সহজ ভাবে খেয়ে নিতে পারবে তা নয়। নীল চীজ – Roquefort চীজ, এক বিকট গন্ধের চীজ তাতে আবার সবুজ সবুজ ছত্রাকের রেখা ফ্রেঞ্চ বাসীর প্রিয় খাদ্য। স্যালাদের উপরে ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা ফ্রেঞ্চ বাগেতের সঙ্গে পরিবেশন করে এই চীজ। প্রথম সেই চীজ সত্যি একটু কষ্ট হয়েছিল। দক্ষিণ ফ্রান্সের বিশেষ এক অঞ্চল থেকেই এই নীল চীজ তৈরি হয়।
এই সময় যখন দক্ষিণ ফ্রান্সে জাঁকিয়ে শীত পড়ে, কখনো বা যখন তুষারপাত হয়, সেই সময় বাজারে ওঠা নতুন আলুর সঙ্গে গলন্ত চীজ – Raclette, এক অতি জনপ্রিয় খাবার এখানে। ফ্রেঞ্চ বন্ধুরা অনেকেই এই Raclette খাবার জন্যে নিমন্ত্রণ জানায়, শীতকালে টেবিলের উপরে হিটার নিয়ে উত্তাপ নিতে নিতে Raclette খাওয়া এক ফ্রেঞ্চ আনন্দের অঙ্গ। শুধু আলু নয়, যে কোন সবজি সেদ্ধর ওপরে এই গলন্ত চীজ ঢেলে খেতে সত্যি অতি অসাধারণ। প্রথম ফ্রান্সে এসে যে চীজের সঙ্গে পরিচয় হল Fromage blanc, একটু চিনি বা নুন মিশিয়ে খেতে খারাপ লাগে না।
খাদ্যরসিক ফ্রেঞ্চরা নানা ধরণের খাদ্য প্রেমে আদ্যপান্ত মুড়ে আছে। নিজেদের সমস্ত কিছু -খাবার থেকে শুরু করে রাস্তা, গাড়ি, পারফিউম, বাগেত, কেক-প্যাস্ত্রি, রান্না, ওয়াইন, ফ্যাশন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার, এয়ারবাস, ফিউশন এনার্জি সমস্ত বিষয়েই ফ্রেঞ্চরা আত্ম গরবী, আত্ম বিশ্বাসী।
I read a lot of interesting content here. Probably you spend a
lot of time writing, i know how to save you a lot of work, there is an online tool that creates high
quality, SEO friendly posts in seconds, just search in google
– laranitas free content source
Great content you post on your blog, i have shared this post on my twitter