বাগানঘেরা তুলুস (Jardin de Toulouse, France)

November, Toulouse, France

এই শহরের বাতাস ধোঁয়ায় আছন্ন নয়, এই শহর বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে। এই শহরের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে বড় সবুজ বাগান, সারা বছরই তুলুসের চারিদিকের বাগান গুলো বহু যত্নে নানান মরশুমি ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়। শুধু কি মরশুমি ফুল গাছ? বাগানের বিশাল বিশাল গাছ গুলো যেন এই শহরের প্রাণকেন্দ্র।

এই শহরে মানুষ শহরের বুকেই দু’দন্ড নির্জনে সবুজের মধ্যে সময় কাটাতে পারে, অনুভব করতে পারে জঙ্গলের নিবিড়তা আর বাগানে চড়ে বেড়ানো হাঁস, পায়রা ও তাদের বাচ্চাদের খাবার ছড়িয়ে অনুভব করে গ্রামীণ জীবনের সরলতা। বিশাল বাগানের উদার শ্যামলিমা, উজ্জ্বল রঙিন ফুলের হাসি শহরের ছোট ছোট ফ্ল্যাট বাড়ীতে থাকার বদ্ধতাকে নিমেষে ভুলিয়ে দেয়। তাই, তুলুসে অনেকেই ছুটির দিনে প্রায় সারাদিনই এই সব পার্কে শুয়ে, বসে, বই পড়ে, রোদের তাপ নিয়ে, হেঁটে, দৌড়ে প্রকৃতির কাছে কাটায়।

François-Verdier র সামনে থেকে Le Grand Rond এর দিকে চলে গেছে গাছের সারি বাধা রাস্তা। বিশাল গোল এই পার্কের মাঝে সুন্দর ফোয়ারা আর চারদিকে ফুলের মেলা। এই পার্কের দু দিকে আরও দুই বিশাল পার্ক তুলুসের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক। Le Grand Rond থেকে সুন্দর সাঁকো উঠে গেছে সতেরো শতকের তৈরি Jardin Royal ও Jardin des Plantes এর দিকে।

বহু পুরনো এই পার্ক Jardin des Plantes এ দেখেছি নানান প্রজাতির গাছ গাছড়ার সমারোহ। এমনকি Jardin des Plantes এ ভারতবর্ষের জাতীয় পাখি ও তার পরিবারবর্গের স্থান হয়েছে। এই শহরের মানুষ গাছ পালা খুবই ভালো বাসে। বিশাল এই পার্কের ভেতরে এক সুন্দর মনুষ্যকৃত পাহাড়, ঝর্ণা – উপরে আবার বসার জায়গা, পাখিদের খাওয়ার জায়গা, প্রচুর গাছ, পুকুরে চড়ে বেড়ানো হাঁস, জলের বয়ে যাওয়ার কল কল শব্দ – পুকুরের মাঝে তৈরি হাঁসের এক ঘর, এক শান্ত পরিবেশ – সব মিলিয়ে এক ভালো লাগা বোধ তৈরি হয়। কি সুন্দর নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে সাধারণ মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভালো জিনিসকে ভালো রাখার পাঠ যে ফ্রেঞ্চদের কাছেই নিতে হয়।

শুধু কি পার্কেই সবুজের ছোঁয়া এখানে? তা নয়, ক্যাপিটলের পাশে Square Charles de Gaulle তুলুসের এক ব্যস্ত জায়গা, সেই ব্যস্ততার মাঝেও প্রচুর সবুজ। জুন-জুলাইয়ে এখানে যেন ফুলের মেলা বসে।  pink crape myrtle  গোলাপি রঙের আবীর ছড়ায় এখানে। আরও কত মরশুমি ফুল গাছ যে রঙের খেলা দেখায়! এখানে আবার ইন্টারনেট প্রেমীদের জন্যে ফ্রি wifi ও আছে।

তুলুস শহর কেন্দ্রের একটু বাইরে প্রায় পঁচিশ একরের উপর তৈরি অপেক্ষাকৃত নতুন আরেক বিশাল পার্ক তুলুসবাসীদের সর্বদাই আকর্ষণ করে – Jardin Compans-Caffarelli, এই পার্কের ভেতরে আবার আরেক ছোট্ট পার্ক – Jardin Japonais । এই ছোট্ট পার্কে ঢোকার মুখেই ধ্যানরত জাপানিস মঙ্কের মূর্তি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয়।

তুলুসের হৃদয় ছাড়িয়ে আরও কিছু দূর গেলে আরও অনেক পার্ক ও বাগান তুলুসের শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে আছে। প্রত্যকেই যেন তুলুসের মানুষকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সদা তৎপর। গাছকে সঠিক মর্যাদা দিয়ে শহরের মধ্যে জায়গা দেওয়ার এই ব্যবস্থা আমাকে খুবই আকর্ষণ করে।

DSCN7026-001 DSCN7025-001

শীত শুরুর সময় গাছের হলুদ লাল পাতা ঝরে এক অদ্ভুত বৈরাগী ছবি তৈরি হয় তুলুসের। নিঃস্ব হয়ে গাছ গুলো দাঁড়িয়ে শীত সহ্য করে। এক ঘূর্ণি হাওয়ায় শুকনো লাল ঝরা পাতা গুলো ঘুরে ঘুরে যখন উড়ে বেড়ায়, বাতাসেও যেন এক উদাসীন সুর বাজে। দিন শেষে হাঁটতে হাঁটতে দেশ থেকে বহু দূরে মন উদাসী হয়, এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে। এক ছুট্টে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে মায়ের আঙিনায়, সন্ধ্যেয় খেলা শেষে ফিরে ছেলেবেলার মত চিৎকার করে ‘মা’ বলে ডেকে উঠতে ইচ্ছে করে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s