আকাশ ভরা সূর্য তারা… la Nuit des étoiles (Toulouse, France)

August 2013, Toulouse, France

ছেলেবেলায় গরমের সময় কত রাত কেটেছে ছাদে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে। মনে পড়ে ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে রাতের আকাশে সপ্তর্ষি, কালপুরুষ চেনার কথা। অন্ধকার রাতে আকাশ গঙ্গার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কত যে স্বপ্ন বুনেছিলাম সেই সব দিনে। কল্পনার জগতে অতি অনায়াসে হারিয়ে যেতাম। সেই সব দিনে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ছিল, নিজের কল্পনাকে লাগামছাড়া করার অঢেল সময় ছিল। উল্কা বৃষ্টি দেখার জন্যে রাত জেগে ছাদে বসে হিম খাওয়ার কথা মনে পড়ে। মনে আছে ‘Hale-Bopp’ ধুমকেতু দেখার জন্যে গ্রামে গিয়ে থেকেছিলাম, নিকষ কালো অন্ধকারে খালি চোখেই হেল বপ দেখা গিয়েছিল। ছেলেবেলায় রাতের আকাশের প্রতি এক অসীম আকর্ষণ ছিল, বাবার মুখে শুনেছিলাম – মহা বিশ্বে, মহাকাশে, মহা কালো মাঝে/ আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে…।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের নানা চড়াই উৎরাইয়ে ভুলেই গেছি আকাশ দেখার কথা, এমনও কত দিন গেছে সন্ধ্যার আকাশের রঙ বদল দেখিনি কাজের চাপে। অথচ সকালের আকাশ, রাতের আকাশ, সন্ধ্যার আকাশ কতই না প্রিয় ছিল। তাছাড়া, এখন তো শহরের আলো ও ধোঁয়াশায় আকাশের তারারাও মুখ ঢেকেছে।

প্রকৃতির এই নক্ষত্র খচিত ক্যানভাস দেখার সুযোগ এলো তুলুসে। প্রতি বছর আগস্ট মাসে যখন আকাশ পরিষ্কার থাকে, ফ্রান্সের সমস্ত অবজারভেটরি গুলো জনসাধারণের জন্যে বিনামূল্যে খুলে দেওয়া হয়। এবারও তুলুসের অবজারভেটরি খুলে দিয়েছিল আগস্ট মাসে (9 to 11 August 2013)। তুলুসের রাতের আকাশ দেখার এই উৎসবের উদ্যোক্তা Planète Sciences Midi-Pyrenees।

ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার জন্যে আকাশ দেখার এই নিমন্ত্রণে আমরাই বা বাদ যাই কেন? ফ্রান্সের মহাকাশ বিজ্ঞানী, অ্যামেচার আকাশ পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থেকে মহাকাশ বিজ্ঞানের সহজ পাঠ দেন জনসাধারণকে, ছোট ছোট বাচ্চাদের। অনেক বাবা মা তাঁদের বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন। বাচ্চাদের মধ্যে সহজ কৌতূহল জাগিয়ে দেওয়ার জন্যে বিশাল বিশাল এই টেলিস্কোপ যথেষ্ট। অনেক বাচ্চাদের দেখছি বিশাল যন্ত্র পাতি দেখে উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে।

তুলুসের নানান জায়গার অবজারভেটরি খুলে দিয়েছে – Cité de l’Espace, l’Observatoire de Jolimont,  Ramonville Saint-Agne। আমরা l’Observatoire de Jolimont বেছে নিলাম। এই অবজারভেটরি Société d’Astronomie Populaire (SAP) এর হেড কোয়ার্টার। এখানে এক অ্যামেচার astronomers এর দল সাধারণ মানুষের মধ্যে আকাশ দেখার উৎসাহ দেয় ও আকাশ পর্যবেক্ষণের নানান প্রোগ্রাম আয়োজন করে। যেমন, প্রতি শুক্রবার রাত নটা থেকে মাঝ রাত মানে ১টা পর্যন্ত l’Observatoire de Jolimont জনসাধারণের জন্যে বিনামূল্যে খোলা থাকে।

আগস্টের এই সময় দিনের দৈর্ঘ্য অনেক লম্বা, রাতের আকাশ দেখতে বহু সময় অপেক্ষা করতে হয়। দিনের আলোয় টেলিস্কোপে চোখ রেখে সূর্যকে দেখে নিচ্ছে অনেকেই। বয়স্কদের চেয়েও বাচ্চাদের উৎসাহ বেশী, অনেক প্রশ্ন করছে বাচ্চারা। বড় বিজ্ঞানীরা ধৈর্য সহকারে উত্তর দিচ্ছেন। আমি দেখেছি, জানার বিষয়কে যতই প্রতিদিনের জীবনে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বাচ্চারা তত বেশী জানে কিংবা নিজে থেকে জেনে নেয়। পড়াশোনা বা জানা মানেই তো শুধু স্কুলের পরীক্ষার বিষয় মুখস্ত করা নয়। পড়াশোনা মানে কোন এক বিশেষ বিষয়ের প্রতি কৌতূহল এবং সেই বিষয়ে আরও আরও বেশী জানা। আর সেই জানার আগ্রহকে উসকে দেওয়াই বোধহয় এখানের এই শিক্ষা মূলক প্রোগ্রামের উদ্দ্যেশ্য। ‘এলেম আমি কোথা থেকে?’ – সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রথম ধাপ এই আকাশ দেখার উৎসব।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s