September 2013, Prague, Czech Republic
চেক রিপাবলিকের রাজধানী, রূপকথা নগরী প্রাগে এসে, কল্পনার সপ্ত পঙ্খিরাজ ঘোড়া যেন সপ্তম আকাশের দিকে পাড়ি দিয়েছে। যে ক্যাসল প্রাগকে রূপকথার জগতে নিয়ে গেছে সেই ক্যাসল দেখেই আমাদের প্রাগ দর্শন শুরু হল।
ট্রামে আসার সময় এক স্থানীয় বয়স্ক চেক ভদ্রমহিলাকে প্রাগের ম্যাপ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এই ট্রাম কি এই ক্যাসলে যাচ্ছে?’ তিনি আবার চোখে কম দেখেন, ব্যাগ থেকে বড় ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস বের করতে করতে ওনার স্টপেজ এসে গিয়েছিল, তিনি আমাদের সেখানেই নামতে বলেন। আমারাও ওনার কথায় শহর কেন্দ্রে নেমে গিয়েছিলাম। বড় ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়ে চোখের খুব সামনে ম্যাপ দেখে বললেন – হ্যাঁ এই ট্রামই ক্যাসল যাচ্ছে। মাঝে মাঝে চলার পথে এমনও মজার ব্যাপার হয়! তারপর আর কি, আবার পরের ট্রামের অপেক্ষা।
পাহাড়ের উপরে Vltava নদীর দৃশ্যপটে বিশাল এলাকা জুড়ে পৃথিবীর অন্যতম পুরনো এই ক্যাসল। প্রাগ ক্যাসল যেন ছোট খাট এক শহর। ঢোকার মুখেই আছে কফি শপ, পাহারায় গার্ড।
প্রাগ ক্যাসলের চত্তরের প্রধান আকর্ষণ রোমান ক্যাথলিক ক্যাথিড্রাল, St Vitus Cathedral – গথিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ উদাহরণ। কারুকার্যে ভরা গথিক এই ক্যাথিড্রালের উঁচু চূড়া আকাশ ছুঁয়েছে। কারুকাজ দেখেই বোঝা যায় এই স্থাপত্য তৈরি করতে বহু সময় লেগেছে। ভেতরে stained glass এর তৈরি জানালার ছবির উপরে সূর্যের আলো পড়ে এক অদ্ভুত আলো ছায়ার খেলা তৈরি হয়েছে, প্রতিটি ছবি যেন এক এক গল্প। ক্যাথিড্রালের ভেতরে খুব ভিড়। এই সময়ে প্রাগে বহু মানুষ বেড়াতে আসে।
এখানে গত পাঁচশো বছর পুরনো বোহেমিয়ার রাজার বাড়ী আজও অক্ষত। অসাধারণ সুন্দর লাল রঙের st george’s basilica জায়গা আলো করে রেখেছে। ক্যাসলের দুর্গের এক অংশে আছে, Mihulka টাওয়ার, যা কিনা এক সময় এলকেমিস্টদের সোনা তৈরির গবেষণাগার ছিল, পরে বারুদ রাখার জায়গা ছিল, এবং এখন জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে – এখন শিল্প প্রদর্শনী হয়।
ইউরোপের অন্যান্য ক্যাসলের মতো এখানেও ক্যাসল গার্ড ঘোরা ফেরা করে, গার্ড বদল হয় কুচকাওয়াজ করে, অনেকেই ওদের ঘিরে ফটো তোলে।
ক্যাসল থেকে সরু রাস্তা নেমে গেছে প্রাগ পুরনো শহরের দিকে। দু’পাশের সুন্দর ছোট বাড়ী অতীতে ক্যাসলের পাহারাদারদের জন্যে ছিল, আজ সেখানে স্যুভেনির শপ, কফির দোকান।
ক্যাসলের এই পথে চলতে চলতে এক ছোট Toy museums দেখা যায়, অনেক পুরনো ও নতুন Toy সাজানো এই মিউজিয়ামের সঙ্গে ক্যাসলের যদিও কোন সম্পর্ক নেই তবুও প্রচুর মানুষ ভিড় করে এই মিউজিয়ামে।
এই ক্যাসলের দেওয়ালের জানালা দিয়ে পুরনো প্রাগের দৃশ্যে মুগ্ধ হই। ভালো লাগে ক্যামেরায় চোখ রাখতে।