রাজধানী জাগ্রেব, যেমন দেখেছি – পর্ব ৩ (Zagreb, Croatia)

September 2013, Zagreb, Croatia

বহুদিন ধরে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ জাগ্রেবকে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করেছে। জাগ্রেবে অন্যান্য ইউরোপিয়ান  শহরের মতোই রেনেসাঁস, বারোক, গথিক, নিও-গথিক- সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। এই শহরে আধুনিক ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য পাশাপাশি রাজত্ব করে।

পাহাড়ি Gradec অঞ্চল থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি, এখনো Lower town দেখা বাকি।

জাগ্রেবের পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়ায় দু’ দন্ড বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে সবুজের অভাব নেই। Zrinjevac পার্কের উদার নবীন সবুজে প্রান ভরে যায়। এই পার্ক এক সময় শুধুই তৃণভূমি ছিল, ১৯ শতকের শুরুতে এখানে পশুর বাজার বসত। আজ বড় বড় প্ল্যান গাছের ছায়ায় এই পার্ক, শহরের মানুষের হাঁটার জায়গা, দু’ দন্ড প্রান ভরে সবুজ দেখার জায়গা, বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের জায়গা। নানা রঙের ফুলের বিছানা দিয়ে সাজানো এই পার্কে বসে একটু বিশ্রাম তো নিতেই হয়।

এই পার্কের শুরুতেই আছে আবহাওয়া দেখার স্তম্ভ। ১৮ শতকের এই স্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে আজও জাগ্রেব বাসীরা দেখে নেই জাগ্রেবের আবহাওয়ার ধরণ, নিজের ঘড়িও মিলিয়ে নেয় এই স্তম্ভের ঘড়ির সঙ্গে।

পার্কে ফোয়ারা না থাকলে কি চলে? তাই পার্কের মাঝেই আছে ‘the mushroom’ ফোয়ারা। ছত্রাকের মতো দেখতে বলেই এই নাম। আরকিওলজিকাল মিউজিয়াম, আধুনিক আর্ট মিউজিয়াম দেখতে দেখতে এগিয়ে যাই জাগ্রেবের রেল ষ্টেশনের দিকে।

ইউরোপের প্রায় সমস্ত শহরের সঙ্গে রেলের যোগাযোগ রাখে ব্যস্ত এই রেল ষ্টেশন। জাগ্রেবের এই রেল ষ্টেশন বহু পুরনো এবং এর স্থাপত্য রেনেসাঁস ও নিও-ক্ল্যাসিকাল উপাদানে তৈরি এক অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন, তাই এই জায়গা অন্যতম টুরিস্ট গন্ত্যব্য।

যারা রেলে আসে জাগ্রেব, ষ্টেশন থেকে বেড়িয়েই পরিচিত হয় জাগ্রেবের সৌন্দর্যের সঙ্গে। এই রেলস্টেশনের ঠিক উল্টো দিকেই বিশাল সবুজ স্কোয়ারে ক্রয়েশিয়ার প্রথম রাজা Tomislav এর ঘোড়ায় চড়া, হাতে উদ্ধত বর্শা সহ এক মূর্তি রাজত্ব করছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে ১৯৪৭ পর্যন্ত এই মূর্তি এই জায়গায় স্থাপনা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক বাধা পেরিয়ে, এখন এই জায়গায় স্থাপিত।

রেলস্ষ্টেশনের বাইরে রাজা Tomislav এর মূর্তির নীচে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সবুজ ঢালের শেষে দূরে হলুদ Art Pavilion এর ইমারত, আর দূরে দিগন্তে নীল পাহাড় রেখা – Medvednica।

পূর্ব আকাশ সেদিন ছিল ঘন ধূসর মেঘের রঙ্গে, সর্বনাশা সাজে। আর পশ্চিম আকাশের পরিণত সূর্যের হলুদ আলো, ধুসর মেঘের প্রেক্ষাপটে যেন জাগ্রেব শহরের এক অপূর্ব ক্যানভাস এঁকেছে।

জাগ্রেব রেলস্টেশনের আশেপাশে মধ্য যুগের অনেক বিশাল ইমারত, স্থাপত্য আজও আধিপত্য বিস্তার করে। বিশাল বিশাল ইমারতের মধ্যে যেন হারিয়ে যাই। হেঁটে যাই পাথরে বিছানো অতীতের পথ ধরে।

চলতে চলতে চোখে পরে Nikola Tesla র এক চিন্তিত ভাস্কর্য। ইউরোপে এই প্রথম কোন এক বিজ্ঞানীর ভাস্কর্য দেখলাম, সাধারণত রাষ্ট্রনেতা বা রাজা-রানিরই ভাস্কর্য চোখে পড়ে, তাই Nikola Tesla র ভাস্কর্য দেখে একটু অবাক হলাম বৈ কি। Nikola Tesla র ক্রোয়েশিয়াতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ইউরোপে পড়াশোনা শেষ করে তিনি পাড়ি দেন আমেরিকা। সেই সময়ে Nikola Tesla র অনেক গুপ্ত ও রহস্যময় আবিষ্কার সেই সময়ে তাঁকে এক জাদুকরের স্তরে নিয়ে যায়। বলা হয়, Nikola Tesla র বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অনেক রহস্য আজও রহস্যময় এবং তা গুপ্তই রয়ে গেছে।     

বড় রাস্তা ধরে হেঁটে হোটেলে ফেরার পথে পড়ে, অতীতের স্টক এক্সচেঞ্জ এর বিল্ডিং আজ সেটা ক্রয়েশিয়ান ন্যাশনাল ব্যাংক। বিশাল এই ইমারত এই জায়গার এক বিশেষ আকর্ষণ।

আমাদের এবার ফিরতে হবে। জাগ্রেবকে জানা ফুরাবে না, প্রতি পদে যে শহরে অতীতের ইতিহাস গ্রথিত সেই শহরকে জানা কি সহজে ফুরায়? তাই জাগ্রেব পরিক্রমায় এখানেই ইতি টেনে ফেরার তোড়জোড় শুরু হয়।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Croatia, Europe, Travel and tagged , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to রাজধানী জাগ্রেব, যেমন দেখেছি – পর্ব ৩ (Zagreb, Croatia)

  1. Krishna বলেছেন:

    sundara-he sundara mugdha holo chakhhu moro dhanna holo antara sundara he sundara

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s