September 2013, Zagreb, Croatia
Zagreb ক্যাথিড্রালকে Ottoman এর আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্যে চারিদিক ঘিরে সুরক্ষা দুর্গ তৈরি হয়েছিল ১৫ শতকে, পরে ১৮ শতকে দুর্গের সামনের দেওয়াল ভেঙ্গে ক্যাথিড্রাল স্কোয়ার তৈরি হয়। আজকের ইউরোপের এই সুরক্ষা দুর্গ সবচেয়ে সুরক্ষিত রেনেসাঁস সুরক্ষার নিদর্শন।
ক্যাথিড্রালের ঠিক উল্টো দিকে, স্কোয়ারের সামনে ফোয়ারার উপরে সোনার পাতে মোড়ানো চার পরী সহ মা-মেরীর মূর্তি এই জায়গাকে ক্রিশ্চান বিশ্বাস, আশা, পবিত্রতা ও মানবতার প্রতীক করে তুলেছে।
ক্যাথিড্রাল থেকে দু পা ফেলে, কাছেই খোলা আকাশের নীচে বসেছে এই শহরের রবিবারের বিশাল বাজার – Dolac Market। জাগ্রেবের আশেপাশের সমস্ত গ্রামবাসীর স্থানীয় বাজার এই Dolac Market। এই বাজার স্থানীয় কৃষকদের শাকসবজি, ফুল, ফলের জন্যে বিখ্যাত। ক্যাথিড্রালের আকাশ ছোঁয়া উঁচু দুই চূড়া এই বাজারের পটভূমিকাকে ছবির মত করেছে। জাগ্রেব বাসীর কাছে এই বাজার ‘the belly of Zagreb’ নামে পরিচিত। বাজারের মুখেই এক বয়স্ক মহিলার মূর্তি, জাগ্রেবের মহিলা তান্ত্রিক বাজারের প্রতীক।
পাহাড়ের ঢালুতে এই বাজারের মাঝে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আবার Ban Jelačić স্কোয়ারে চলে আসি, কিছুক্ষণ পরেই ঠিক বারোটার সময়ে এই স্কোয়ারে প্রহরী বদল হয়। গার্ডরা ঘোড়ায় চড়ে বাজানা বাজিয়ে জমকালো পোশাকে গার্ড বদল করল।
কিছুক্ষণ গার্ড বদল দেখে এই স্কোয়ারেই দুপরের খাওয়া সেরে নিলাম। এবার আমাদের উদ্দ্যেশ্য পাহাড়ের উপরের পুরোন জাগ্রেব শহর।
ম্যাপ দেখে পথ চলি। Tkalčićeva Street ধরে হাঁটি, প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে শুধুই খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট, কফি শপ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা ঘাট। এই রাস্তা Upper Town Gornji Grad এর দিকে গেছে।
উপরের শহরে ঢোকার এক প্রবেশদ্বার the Stone Gate , কথিত আছে ১৭শতকের এক বিশাল অগ্নিকান্ডে এই গেট সম্পূর্ণ জ্বলে যায়, শুধু আশ্চর্যভাবে বেঁচে যায় মা মেরী- কোলে শিশুর এক ছবি। ছবিটি ১৭শতকের কোন এক অনামি চিত্রকরের আঁকা। জাগ্রেবের মানুষ বিশ্বাস করে এই ছবিটির কোন এক অলৌকিক শক্তি আছে, তাই এই জায়গা প্রার্থনার এক পবিত্র জায়গা, মোটা প্রাচীরের এই গেটের নীচে তাই আধো অন্ধকারে কিছু চেয়ার রাখা, লোহার জালের ভেতরে মা-মেরির ছবির সামনে কিছু ফুল রাখা, মোমবাতি জ্বলছে। এই ছবি জাগ্রেব বাসীর মনকামনা পূর্ণ করে।
the Stone Gate ছাড়িয়ে ঢালু রাস্তা ধরে হেঁটে চললাম উপরের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে St. Mark’s Church স্কোয়ার, এই চার্চ স্কোয়ার জাগ্রেবের উপর অংশের প্রাণকেন্দ্র। এই স্কোয়ারের মধ্যেই আছে ১৩ শতকের St. Mark’s Church, রঙিন টাইলসের ছাদ এই চার্চকে অন্যান্য চার্চ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে। বোধহয় জাগ্রেবে টুরিস্টরা এই চার্চের সবচেয়ে বেশী ফটো তোলে, বলা যায় জাগ্রেবের প্রতীক এই চার্চ।
এই স্কোয়ারের শেষে রাস্তার দু’পাশে বহু ঐতিহাসিক স্থাপত্য দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের পথ চলা সেই ইতিহাসের মধ্য দিয়ে। পৌঁছে গেলাম Croatian museum of naive art । পৃথিবীতে একমাত্র এখানেই naive art এর জন্যে মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে। সাধারণত অনামি চিত্রকরের আঁকা ছবিই naive art এর বিশেষত্ব , কিন্তু এখানে ক্রোয়েশিয়ার অনেক বিখ্যাত চিত্রকরের আঁকা ছবি সংগ্রহে আছে।
Gornji Grad এর পাহাড়ের উপরে জাগ্রেবের Gradec অঞ্চল। পাহাড়ের উপর থেকে জাগ্রেব শহরকে খুব সুন্দর দেখায়। উপরের এই অংশে আছে ১৩ শতকের Lotrščak Tower, আগে সূর্যাস্তের সময়ে এই টাওয়ারের উপরের ঘণ্টা বাজিয়ে শহরের মানুষকে ঘরে ফেরার জন্যে সংকেত দেওয়া হত।
আজও প্রতিদিন ঠিক দুপরে এই টাওয়ারের উপরের ঘর থেকে কামান দাগা হয়। বলা হয়, এই কামান দাগা ১৮৭৭ এর নতুন বছর সূচনা করার সময় দাগা হয়েছিল এবং সেই প্রথা আজও চলেছে। আবার অন্য গল্প কথিত আছে, এই শহরের মানুষকে হাঙ্গেরির রাজা এই কামান দিয়েছিলেন। যাইহোক, এই কামান দাগার কারণের পেছনে বহু গল্প জড়িয়ে থাকলেও, আজও জাগ্রেবের মানুষ কামান দাগার শব্দের সঙ্গে নিজের ঘড়ি মিলিয়ে নেয়।
এই Gradec অঞ্চলের দক্ষিণে সুন্দর হাঁটার রাস্তা তৈরি হয়েছে – Strossmayer Promenade। এই রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট দোকানে স্থানীয় শিল্পীর আঁকা ছবি, হাতের কাজ বিক্রি হয়। ১৯শতকের শেষের দিকে স্থানীয় মানুষের দেওয়া টাকায়, দু’পাশে গাছ লাগিয়ে সুন্দর এই রাস্তা তৈরি হয়। জাগ্রেব শহরের দৃশ্য দেখতে দেখতে এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কবি Antun Gustav Matoš দেখা হবেই। ক্রয়েশিয়ান কবির মূর্তি বেঞ্চে বসে জাগ্রেব শহরের দিকে আজও তাকিয়ে আছে।
এই রাস্তার শেষে উপর থেকে দূরে ক্যাথিড্রালের চূড়া দেখা যায়, এখান থেকে শহরের দিকে সিঁড়ি নেমে গেছে।
Nice post !
Thank you…