April 2011, Schwangau, Germany
মাত্র আঠারো বছর বয়সে ব্যেভেরিয়ার রাজ সিংহাসনের দ্বায়িত্ব পেয়ে রাজার মন ভালো নেই। রাজ কাজের চেয়ে মন বেশী সুন্দর প্রাসাদের গঠনশৈলীতে। ভালো লাগে অপেরা দেখতে, শুনতে। নিজের কল্পনার দুনিয়ায় মগ্ন রাজা ব্যেভেরিয়ান আল্পসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ। রাজার খেয়াল হল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আকাশে একটা প্রাসাদ গড়তে হবে। রাজার খেয়ালে ইন্ধন যোগাল অপেরার ডিরেক্টর, বন্ধু Richard Wagner। তৈরি হল নক্সা, পছন্দ হল রাজার। শুরু হল প্রাসাদ তৈরির কাজ।
রাজ্যের কোষাগারে টান পড়ল। রাজ্যের পাহারার জন্যে দুর্গ নয়, প্রাচীর নয় – শুধুই সৌন্দর্য উপভোগের জন্যে এতো খরচ? রাজাকে বলা হল পাগল। দেনায় ডুবতে থাকলো রাজা Ludwig II। বাস্তবের সমস্যা থেকে বহু দূরে রাজা এক স্বপ্নের দুনিয়ায়, এক ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় বাস করে। রাজার ঘরের দেওয়ালের ছবিও সেই ফ্যান্টাসির কথা বলে। রাজার সেই কল্পনার দুনিয়ায় ইন্ধন যোগায় Wagner এর অপেরা।
জগতে বোধহয় আশ্চর্য ইতিহাস, আশ্চর্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে পাগলদের একচেটিয়া অধিকার। আমরা সাধারণ মানুষ তাদের পাগল বলে হেলা করি আবার সেই পাগলের সৃষ্টি দেখতেই ছুটে যাই।
এদিকে প্রাসাদ শেষের মুখে, ঋণে ডুবে আছে পাগল রাজা। তেমনি সময়ে লেকের জলে রাজার রহস্যময় মৃত্যু হল। রাজার রহস্যময় মৃত্যুকে ইতিহাস বলে আত্মহত্যা কিংবা গুমহত্যা। ঋণে ডুবে থাকা রাজার হয়তো নিজের মধুর স্বপ্নের জগতের বাইরের কঠিন বাস্তব জগতে বাঁচার চেয়ে, মৃত্যুই শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল!
রাজা মারা যাওয়ার মাত্র চারদিন পরেই এই প্রাসাদের দরজা জন সাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। সেই দিন থেকে আজও প্রতিদিন পাগল রাজার পাগলামির নিদর্শন দেখতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এই প্রাসাদের দরজায় ভিড় করে। গরমের সময় প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার মানুষ এই ক্যাসল দেখতে আসে।
দক্ষিণ ব্যেভেরিয়ার এক ছোট্ট শহর ফুসেনের ট্রেন ষ্টেশন থেকে বাস পাওয়া যায় এই স্বপ্ন-প্রাসাদের। সেই বাস Schwangau পৌঁছে দেয়। কিছুটা হেঁটে Neuschwanstein Castle এর পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছে যাই। তারপরে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে উঠে যেতে হয় ক্যাসলের দোরগোড়ায়।
সাদা পাথরের ক্যাসলটি সত্যিই যেন স্বপ্নের ক্যাসল, রূপকথার ক্যাসল। এমনকি এই ক্যাসল ওয়াল্ট ডিজনিকে প্রেরণা দিয়েছে। এর আদলেই তৈরি হয়েছে ডিজনিল্যান্ডের রূপকথার প্রাসাদ।
ক্যাসল থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই Queen Mary’s Bridge (Marienbrucke)। নীচে বিশাল খাদ আর দুই পাহাড়কে জুড়েছে লোহার এই ঝুলন্ত সেতু। এই সেতু থেকেই Neuschwanstein Castle এর দৃশ্য সবচেয়ে ভালো দেখা যায়, তাই এই ব্রিজে টুরিস্টদের ঠেলাঠেলি। সবাই চায় ক্যাসেলকে পেছনে রেখে একটা ফটো। টুরিস্টদের পায়ের ছন্দে আর হাওয়ায় ঝুলন্ত সেতুটি রীতিমত দোলে।
অদ্ভুত সুন্দর এই প্রাসাদের স্মৃতি এঁকে এবার ফেরার পালা। দিন শেষের সূর্যের আলো সাদা প্রাসাদের গায়ে রঙ ছড়িয়েছে। পাগল রাজা Ludwig এর জন্যে একটু যেন মনখারাপ হল। সবাই যখন ঘরে ফেরে পাগল রাজার আত্মা হয়তো আজও রাতের নির্জনে এই রূপকথার প্রাসাদের আনাচে কানাচে ঘোরে। তাঁর কথায় “I want to remain an eternal mystery to myself and others”।
Ba: eto itihas jantam na to,,, khub bhalo laglo