April 2011, Salzburg, Austria
সুর যেন এই শহরের বাতাসে ভাসে। এখানে মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় এখনো মোৎজার্ট জীবিত। শুধু মোৎজার্টএর সুর শুনেই এরা থেমে থাকে নি। মোৎজার্ট কে নিয়ে এখানের মানুষ বাঁচে, মোৎজার্ট এখানের মানুষের জীবিকা।
ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে যে কোন সময় মোৎজার্ট এর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে, মানুষ সমান মোৎজার্টের মূর্তি রাস্তার দু’ধারে দোকানের সামনে। মোৎজার্টের নামে রাস্তা, মোৎজার্টের নামে ব্রিজ, মোৎজার্টের নামে রেস্টুরেন্ট। মোট কথা মোৎজার্ট চারিদিকে, মোৎজার্টে যেন এই জায়গার মানুষ ডুবে আছে। এমনকি মোৎজার্ট খাওয়াও যায়! শুনে অবাক লাগতেই পারে। মোৎজার্টের নামে এক চকোলেট Mozartkugeln। মোড়কে মোৎজার্টের ছবি, মোড়ক ছাড়িয়ে মুখে দিলে গলে যায় চকোলেটটি। মোৎজার্টের বাড়ীর সামনে প্রচুর ভিড়। সামনে রেস্টুরেন্টে মোৎজার্টের প্রিয় খাবার, প্রিয় পানীয় – অনেকেই চেখে দেখছে।
মোৎজার্টের বাড়ীর ডানদিকের রাস্তায় সারি সারি দোকানে যা কিছু পাওয়া যায় সব কিছুতেই মোৎজার্ট জড়িয়ে আছে। তবে এই শহর শুধু যে মোৎজার্টের জন্মভূমি তা নয়। মোৎজার্টের বাড়ী ছাড়িয়ে পুরনো শহরের দিকে হেঁটে গেলেই নজরে পড়ে উত্তর আল্পসের দৃশ্যপটে ছবির মত অষ্ট্রিয়ার এই শহরটি ‘সেলজবারগ’। সেলসবারগ শুনলেই ‘The Sound of Music’ এর দৃশ্য চোখে ভাসে, পর্দায় সরে সরে যাওয়া আল্পসের উদার দৃশ্য, সবুজ মাঠ, সুরেলা সুর। গানের কথা গুলো যেন গুন গুনিয়ে ওঠে …Snowflakes that stay on my nose and eyelashes/Silver white winters that melt into springs/These are a few of my favorite things…।
এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে Salzach নদী। Baroque স্থাপত্যের নিদর্শন পুরনো সেলসবারগ শহর, আজ UNESCO World Heritage Site।
ব্রিজ পেরিয়ে পুরনো শহরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই মিরাবেল প্যালেস (Mirabell Palace)। The Sound of Music সিনেমার জন্যে এই প্যালেসের ঘরের নক্সা সবার জানা।
এপ্রিলের এই সময়ে মিরাবেল প্যালেসের বাগান হাজার টিউলিপ আলো করে রেখেছে। বাগানের সবুজ ঘাসের গালিচায় নানা রঙের ফুল দিয়ে যেন আলপনা আঁকা হয়েছে। এখনো এই প্যালেসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। মিরাবেল প্যালেস থেকেই দূরে পাহাড়ের উপরে দেখা যায় Hohensalzburg Castle।
পথে পড়ে সেলসবারগ ক্যাথিড্রাল। ক্যাথিড্রালের সামনে ঘোড়ার গাড়ি জায়গাটাকে যেন আরও বেশী ঐতিহাসিক করেছে। আধুনিকতার সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে ইউরোপের তুলনা নেই। ইউরোপ দৃশ্যকে মনমুগ্ধ করে তোলার সমস্ত আয়োজন করে, তাই তো পৃথিবীর নানা কোণ থেকে মানুষ শুধু ইউরোপের ঝলক দেখতে ফিরে ফিরে আসে।
পাহাড়ের উপরে ক্যাসেলে যাওয়ার পথে বিশাল এক চত্তর পড়ে। চত্তরের একদম মাঝে আছে পিতলের বিশাল এক বল, উপরে আবার এক মানুষের মূর্তি। এই চত্তরে দাবা খেলা মানুষের প্রিয় খেলা। বিশাল বিশাল দাবার ঘুটি সাজানো, খালি থাকলে যে কেউ দাঁড়িয়ে যেতে পারে দাবার পরের চাল দিতে, সবাই স্বাগত। এপ্রিলের রোদে এখানে এখনো উত্তাপ খুব একটা নেই। মৃদু ঠাণ্ডা গরমে তাই বিশাল পিতলের বলের ছায়ায় কিস্তিমাতের খেলা চলে।
পথের খেলা পথে ফেলে এগিয়ে যাই, ফুনিকুলারে করে পাহাড়ের উপরে ক্যাসলে পৌঁছে সেলসবারগের দৃশ্যে মুগ্ধ হতেই হয়। ক্যাসেলের ভেতরে এখনো খুব যত্ন সহকারে পুরনো দিনের অস্ত্র সস্ত্র সাজানো আছে। ক্যাসেলের চত্তরে দুপুর রোদে গাছের ছায়ায় এখনো যেন শান্ত পুরনো দিন ফিরে আসে। অনেকেই ক্যাসেলের পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে ক্লান্ত, গাছের ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেয়।
দিন শেষ হয়ে আসে। সূর্যের আলো তেরছা হয়ে পাহাড়ের ছায়ায় যেন একটু তাড়াতাড়িই সন্ধ্যা হয়। ফিরে আসি।