ভোরের ভ্যাটিকান (Vatican City)

April 2009, Vatican City

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম স্বাধীন, ধনী দেশটি এক দেড় ঘণ্টাতেই ঘুরে দেখা যায়। ইতিহাসের নানা সময়ের সাক্ষী এই ছোট্ট দেশ – ভ্যাটিকান সিটি।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে রোম পোপের শাসনে চলে আসে, এবং পোপ হয়ে যায় রাজা-পোপ। আধুনিক সময়ে ভ্যাটিকানকে ছেড়ে পোপ শাসিত রোমের অনেক অংশ চলে যায় ইতালির ভেতরে। পোপ ষাট বছর ইতালির অস্ত্বিত্ব অস্বীকার করে ভ্যাটিকান সিটির দেওয়ালের ভেতরে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। শেষে ১৯২৯ সালে Lateran Treaty সাক্ষর হয় ও ভ্যাটিকান এক স্বাধীন দেশ বলে গন্য হয়।

ভ্যাটিকান সিটি, তার ইতিহাস, পোপ সবই এক কঠিন, জটিল ইতিহাসের বিষয়। তবে এই পৃথিবীর বুকে ভ্যাটিকান এক অলঙ্কার। এতো ঐশ্বর্য, এতো আশ্চর্য রহস্য এর গায়ে! ভ্যাটিকানের ভেতরে নাকি অনেক গোপন সুরুঙ্গ আছে, পোপের আত্মরক্ষার জন্যে।

প্রতিদিন এখানে প্রচুর ভিড় হয়। খুব সকালে না গেলে লম্বা লাইনের পেছনে দাঁড়াতে হবে। আর এক ঘণ্টার জায়গায় পাঁচ ঘণ্টাও লাগতে পারে। তাই সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই চলে এলাম ভ্যাটিকান সিটির দরজায়। সবে দরজা খুলেছে।

St. Peter’s Basilica য় ঢুকেই অলঙ্কৃত উঁচু ছাদের নীচে নিজেকে খুবই ক্ষুদ্র মনে হল। রেনেসাঁস যুগের পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী দলের সম্মিলিত সৃষ্টি এই বিশাল চার্চ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ এই St. Peter’s Basilica, প্রায় দেড়শ বছর ধরে তৈরি হয়েছে! এই চার্চ শুধু এক স্থাপত্য নয় – এক মহৎ শিল্প কলার নিদর্শন। দিনের বেলা চার্চের ভেতরে সাধারণত একটু আঁধার হয়, কিন্তু এখানে দিনের নানা সময়ে সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ বেসিলিকার ভেতর আলোকিত করে তোলে।

মিকেলাঞ্জেলো নিজের জীবনের সমস্ত সৃষ্টিশীলতাকে যেন উজার করে দিয়েছেন এই বিশাল চার্চের প্রতিটি কোণে। এক একটি ছবি, এক একটি মূর্তি যেন প্রান পেয়েছে তাঁর হাতের জাদুতে। কিছুদিন আগে ভ্যাটিকান সংগ্রহে মিকেলাঞ্জেলোর হাতে আঁকা এই বেসিলিকার এক টুকরো স্কেচ পাওয়া গিয়েছিল। শেষ জীবনে মিকেলাঞ্জেলো নাকি এই বেসিলিকার অনেক স্কেচ নিজের হাতে নষ্ট করে দেন, তাই স্কেচটি ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অনেক মূল্যবান এক দলিল।

এখনো লোক আসা শুরু হয়নি। দেখতে দেখতে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। সুইস পাহারাদার জমকালো রেনেসাঁস যুগের পোশাকে সর্বদা পাহারায়। বাইরে সেন্ট পিটার স্কোয়ারে ইজিপ্ট থেকে আনা প্রায় চারহাজার বছরের পুরনো এক বিশাল অবেলিক্স (obelisk) দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে।

ভ্যাটিকান সিটির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে টাইবার নদী। নদীর ধারের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম Sant’Angelo ব্রিজ , সেতুর দু’ধারে পাথরের পরি স্বাগত জানায়। ব্রিজের ওপাশে রোমান রাজা Hadrian এর সমাধি Castel Sant’Angelo। শোনা যায় ভ্যাটিকান ও এই ক্যাসলের মধ্যে এক গুপ্ত সুরুঙ্গ আছে, পোপের আত্মরক্ষার জন্যে।

ফিরে আসছি, দূরে দেখা যাচ্ছে St. Peter’s Basilicaর চূড়া। সারা গায়ে রহস্য নিয়ে, ঐশ্বর্য নিয়ে আজও ভ্যাটিকানের দরজা খোলে হাজার মানুষের জন্যে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel, Vatican City and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s