February 2009, Nice, France
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে নিসের কার্নিভ্যাল শুরু হয়। দু’সপ্তাহের জন্য নিস উৎসবের সাজে আরও ঝক ঝকে হয়ে ওঠে। নিসের কার্নিভ্যালের সময় দিনে যেমন চলে ফুলের উৎসব, নানান অদ্ভুত পোশাক পরে শোভাযাত্রা, নাচ, গান – তেমনি রাতে কার্নিভ্যালের আসর আরও জম জমাট হয়ে ওঠে।
রাতে হয় লাইট প্যারেড। এই লাইট প্যারেডও নিসের ফেব্রুয়ারি কার্নিভ্যালের অঙ্গ। রাতে নিসের মধ্যস্থল জুড়ে কার্নিভ্যালের লাইট জ্বলে ওঠে, আলোকিত হয়ে ওঠে জায়গাটা।
দূর থেকে শুধু লাইট দেখে প্রচুর মানুষ হেঁটে চলেছে রাতের এই লাইট প্যারেড দেখার জন্যে।
লাইট প্যারেডে বিশাল বিশাল দৈত্যাকার পুতুল, তাঁদের আবার নানান সাজ, বড় খোলা ট্রাকে শোভাযাত্রা হয়। প্রতিটি ট্রাকের বিশাল দৈত্যাকার পুতুল গুলিতে আবার নানান লাইটের খেলা।
এই বিশাল পুতুল গুলো বিশেষ যত্ন নিয়ে নামকরা আন্তর্জাতিক পত্র পত্রিকার আর্টিস্ট ও কার্টুনিস্টরা তৈরি করেন।
প্রতি বছর এই কার্নিভ্যালের বিষয় ঠিক হয়, যেমন ২০০৯ এর কার্নিভ্যাল দে নিসের থিম হল মুখোশের রাজা ‘Roi des Mascarades’ বা ‘King of Masquerades’।
মুখোশ কি ভাবে আসল মানুষটিকে লুকিয়ে ফেলতে পারে তারই এক নমুনা এই উৎসবের এ বারের থিমে। নানান রকম মুখোশের বিশাল বিশাল স্ট্যাচু, মুখোশের বিশাল মাথা ইত্যাদি দিয়ে সাজানো এই অদ্ভুত প্যারেড।
মুখোশের আড়ালে নিজেকে বদলে ফেলার এই উৎসবে নানান দল সেজেছে নানান মুখোশে। কেউ বা সেজেছে নামকরা কার্টুন চরিত্র, কেউ বা সেজেছে রাশিয়ান কাঠের পুতুল Matryoshka। জোকার, শকুন, বাজ পাখি, ড্রাগন, ডাইনোসর কি নেই এই মুখোশের ভিড়ে।
এক বিশাল কিম্ভূত স্ট্যাচু দেখে বেশ হাসি পেল – অনেক সরীসৃপ যেন স্তূপ করে রাখা আর প্রত্যেক সরীসৃপের চোখ উল্টে জিভ বেড়িয়ে গেছে। ধীরে ধীরে আমাদের সামনে দিয়ে বিশাল Parade float টা চলে গেল। পেছনে আরও কিছু সরীসৃপ মুখোশধারী মানুষ নাচতে নাচতে চলেছে।
ইউরোপের নানান দেশ থেকে আসা নানান দলের নানান রকমের নাচ, গান, মুখোশের শোভাযাত্রা একে একে চলেছে আমাদের সামনে দিয়ে। নানা দেশের সঙ্গীতের তালে মাঝে মাঝেই উপস্থিত দর্শক আন্দোলিত হচ্ছে।
আফ্রিকা থেকে আসা এক দলের বিশাল আফ্রিকান মুখোশ ও পেছনে আফ্রিকান গানের সঙ্গে নৃত্যরত মানুষের দল চলেছে।
প্রত্যেক দল উপস্থিত জনতার উদ্দ্যেশ্যে ছোট ছোট রঙিন কাগজের টুকরো ‘Confetti’ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
ফেব্রুয়ারির শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে নাচ, গান, আলোর নাচন, প্রচুর উৎসাহিত দর্শক – সব মিলিয়ে বেশ মজার ব্যাপার।
অনেক রাত হয়ে গেছে, এবার খেলা ভাঙ্গার খেলা। দর্শকেরা ধীরে ধীরে ফিরে চলেছে নিজ বাসস্থানে, নিজ গৃহে। বহুক্ষণ ধরে নৃত্যরত মুখোশধারীরা ক্লান্ত হয়ে খুলে ফেলছে নিজের মুখোশ, মুছে নিচ্ছে শীতের রাতে অধিক ক্লান্তির ঘাম।
এই উৎসবে প্রত্যেক মুখোশের আড়ালে অন্য মানুষ, অন্য পরিচয় – কোনো দিনও জানতে পারবো না এই মুখোশ ধারী মানুষদের আসল পরিচয়। শীতের রাতে আস্তানায় ফেরার জন্যে জোরে পা চালালাম, দূরে ভেসে আসছে খেলা ভাঙ্গার গান, এখনো কিছু দল প্যারেডের শেষ বৃত্তে।