February, 2009, Nice, France
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি – এই সময়ে ফ্রেঞ্চ রিভেইরা অঞ্চলে বছরের প্রথম হলুদ মিমোসা ফুল ফোটে। ফ্রান্সের গ্রাম গঞ্জে সোনালি হলুদ এই ফোটা ফুলের মেলা যেন চোখে ধাঁধা লাগায়। মিমোসার মৃদু মিষ্টি গন্ধ ঘোর লাগায়। তাই বেশীরভাগ মিমোসা ফুলের চাহিদা ফ্রান্সের পারফিউম গ্রাম গ্রাসে।
দীর্ঘ শীতের ধূসরতা কেটে গিয়ে ফ্রেঞ্চ রিভেইরা উজ্জ্বল হলুদ হয়ে ওঠে এই মিমোসার আগমনে আর সেই মিমোসার পথ ধরে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সের সমুদ্র শহর নিস সেজে ওঠে ফুলের উৎসব – Carnival de Nice এর জন্যে।
ফুল উৎসবের শুরু হয় মিমোসা রানী নির্বাচন করে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কার্নিভ্যাল গুলোর মধ্যে অন্যতম নিসের এই কার্নিভ্যাল। কয়েক লক্ষ মানুষ এই কার্নিভ্যাল উপলক্ষে এখানে আসে। নিস জমজমাট হয় এই কার্নিভ্যাল ঘিরে, এই ফুলের প্যারেড ঘিরে।
এই কার্নিভ্যালের সূচনা ঠিক কবে জানা নেই তবে, ইতিহাসের পাতা ধরে পিছিয়ে গেলে জানা যায় এই কার্নিভ্যাল হয়তো বা শুরু হয়েছিল ১২৯৪ এ। তবে ফুলের এই কার্নিভ্যাল প্রথম হয় ১৮৭৬ সালে।
নিসে সমুদ্রের ধার ঘেঁসে যে বড় রাস্তা গেছে Promenade des Anglais সেই রাস্তা জুড়ে ব্যারিক্যাড দিয়ে বিশাল এই কার্নিভ্যাল হয়। রাস্তার দু’ধারে দর্শকের বসার ও দাঁড়ানোর জায়গা।
নীল আকাশের নীচে, সমুদ্রের হালকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় মিউজিকের সঙ্গে দুপুরের দিকে শুরু হল এই কার্নিভ্যাল। বড় ট্রাক, খোলা গাড়ির উপরে বিশাল বিশাল সজ্জা – নানান ফুলের বিশাল তোড়া। কোন কোন মেয়েদের পোশাক শুধুই ফুল দিয়ে সাজানো। ফুল সাজানো গাড়ির ওপরে বসে ফুলের পোশাকে ফুল পরি, হাতে মিমোসা ফুলের বড় তোড়া। সেই তোড়া থেকে কিছু মিমোসা ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে উপস্থিত দর্শকের দিকে। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে মিমোসা ফুল লুফে ধরার জন্যে এক হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
শুধু কি মিমোসা? ফ্রেঞ্চ রিভেইরা এই সময় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। তাই সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপি – গোলাপ, গ্লাডিওলা, জারবেরা, Delphinium, Anthurium, Calla Lilies, Carnations, daisies, tokyos ও লিলি ফুলের মেলা এই কার্নিভ্যালে। প্রায় এক লক্ষেরও বেশী ফুলের ছোট ছোট তোড়া উৎসাহী দর্শকের দিকে ছুঁড়ে দেয় সেই ফুল সাজানো গাড়ির ফুল পরিরা। এই ফুল উৎসবের প্রায় সমস্ত ফুলই স্থানীয়, মানে ফ্রেঞ্চ রিভেইরার উৎপাদন। এই ফুল উৎসবে ফ্রান্সের ফুলের প্রদর্শনীও হয়ে যায়।
কার্নিভ্যালে যেমন হয় ফুলের প্যারেড হয় তেমনি কিম্ভূত-অদ্ভুত পোশাকে সেজে, বাজনা বাজিয়ে, গান গেয়ে নানান দলের শোভাযাত্রাও হয়।
কার্নিভ্যালের মিউজিকের সুর, উৎসবের আনন্দে হাসিমুখে জনতা ও তাঁদের উৎফুল্লিত কোলাহল, সমুদ্রের ধার, মৃদু শীতে রোদের নরম উত্তাপ, ঝকঝকে নীল আকাশ – সব মিলিয়ে কেমন এক ভালো লাগা আমেজ তৈরি হয়। সেই আন্তর্জাতিক ভিড়ে হারিয়ে যাই। ফুল পরির ছুঁড়ে দেওয়া এক ঝাঁক মিমোসা ফুল লুফে নিতে ব্যস্ত হয়ে যাই।