আমরা, বেশ সকালেই রিগা শহরটিকে দেখার জন্যে বেরিয়ে পড়েছিলাম। রিগার অন্যতম প্রধান রাজপথ Brīvības bulvāris বা Freedom Boulevard ধরে হাঁটছিলাম – উদ্দেশ্যে ছিল রিগার ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র।
প্রায় বারো কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা রিগার ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে রিগার শহরের বাইরে গিয়ে শেষ হয়। সময়ের পথ ধরে, আধুনিক রিগার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এই রাস্তাও বিস্তারিত হয়েছে, দীর্ঘ হয়েছে। এই রাস্তাকে ঘিরে রিগা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই রাস্তা রিগার অন্যতম ট্রেড রুট।
আর, বর্তমানে এই রাজপথকে অনেক অংশে আধুনিক ও প্রাচীন রিগার সংযোগ বলা যায়, এই রাস্তাকে ঘিরেই আধুনিক ও ঐতিহাসিক রিগার জীবন স্পন্দন। পথে পড়ে রিগার নানান ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং Freedom মনুমেন্ট, আর এই মনুমেন্টের কাছে রিগার বেশ কয়েকটা রাস্তা এসে মেশে। সেই মনুমেন্ট ছাড়িয়ে রিগার আধুনিক অংশের স্থাপত্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছিলাম।
সেই দিন সকালে রিগার মতো রাজধানী শহরের এই অন্যতম রাজপথটি ছিল প্রায় জনমানব শূন্য। আমরা সেই খালি রাজপথ ধরে, সেই প্রাচীন শহরটিকে দেখে নেওয়ার জন্যেই হেঁটে চলেছিলাম। আসলে, সেই দিনটা ছিল ছুটির – লাটভিয়ার জাতীয় দিবস।
উজ্জ্বল সোনালি রোদ্দুর ও পরিষ্কার নীল আকাশ – এই দুইয়ে মিলেমিশে এই রাজধানী শহরটিকে যেন একদম ঝকঝকে, তকতকে করে তুলেছিল। প্রকৃতিও যেন এই প্রাচীন শহরের মানুষের উৎসবের আনন্দে অংশ গ্রহন করেছিল।
আর সেই সকালে রিগার স্থানীয় মানুষও সেই উৎসবের জন্যে তৈরি হচ্ছিল। একটু পরেই দেখা যায়, স্থানীয় মানুষ দল বেঁধে, জাতীয় পোশাক পড়ে শহর কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছে। আমরাও সেই স্থানীয় মানুষের ভিড় অনুসরণ করে পৌঁছে গিয়েছিলাম রিগার ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রে – যেখানে জাতীয় উৎসবের জমজমাট সব আয়োজন ছিল।
স্থানীয় বাজনা, নাচ, গান, প্রসেশন ইত্যাদি নিয়ে এক রিতিমত উৎসব মুখরিত এক পরিবেশ ছিল – এক নতুন অচেনা দেশে এসে যে পরিবেশের অংশীদার হতে ভালোই লাগে । তাই, দেখি আমাদের মতো অনেকেই যারা রিগা শহরকে দেখতে এসেছিল, এই শহরে এসে স্থানীয় উৎসবের জোয়ারে যোগ দিয়ে দিয়েছে।
তারা, সেই ভিড়ে মিশে গিয়ে হোটেলে ফেরার পথ হারিয়েছে আবার সেই ভিড়েই হারানো পথ খুঁজে পেয়েছে। আর রিগার এক সোনালি-নীল দিনের উজ্জ্বল ভ্রমণ স্মৃতিকে সাজিয়ে নিয়ে ফিরেছে নিজের দেশে। আর হয়তো বা, কোন এক ভোর রাতের স্বপ্নে রিগার সেই রাজপথের মোড়ে নিজেকে পেয়েছে।