সেদিন সকালে এই রাস্তাটিকে যখন সিটি ওয়ালের উপর থেকে দেখেছিলাম – সকালের সোনালি রোদ্দুর শ্বেতপাথরে বাঁধানো রাস্তাটির পিছল গায়ে পিছলে যাচ্ছিল। রাস্তাটিকে এক উজ্জ্বল আলোয় ধুইয়ে দিচ্ছিল – আর রাস্তাটির গা থেকেও যেন এক অদ্ভুত উজ্জ্বল আলো ঠিকরে পড়ছিল।
সকালের শান্ত নির্জন রাস্তাটির একাকীত্ব দেখে কে জানতো, ঠিক দুপুর হওয়ার আগেই পৃথিবীর নানা দিকের মানুষের ভিড়ে এই রাস্তা উপছে পড়ে।
দুপুরের রোদ্দুর যখন আকাশের এক দিকে একটু সরে যায় – এই ঐতিহাসিক শহরের প্রধান রাজপথে সেই সোনালি রোদ্দুর এক অদ্ভুত নিশ্চিন্ত ছায়া ফেলে।
সেই ছায়ার পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে এই প্রাচীন শহরটির জীবন ধারণকে অনুভব করে নেওয়া যায়। চলার পথে ক্লান্ত হলে থেমে গিয়ে পথের পাশের আইসক্রিমের দোকান থেকে এক দুই স্কুপ আইসক্রিম নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করা যায়, কিংবা কোন এক কফির দোকানে থেমে গিয়ে কফির কাপে চুমুক দিয়ে ক্লান্তি জুরিয়ে নেওয়া যায়।
কিংবা শুধু এই জায়গাটিকে দেখার আনন্দেই হেঁটে চলা – দুই পাশের ঐতিহাসিক পরিবেশকে উপভোগ করা, এখানে চলার পথে এক একটি মুহূর্তকে ধরে রাখা – দুব্রভনিকের এই প্রধান রাজপথ Stradun ধরে হেঁটে যাওয়ার উদ্দেশ্য তো এটাই।
ঐতিহাসিক দুব্রভনিক শহরকে এই Stradun রাজপথ দুই সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে – বলা যায় সমান ভাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে এই ঐতিহাসিক শহরকে ভাগ করেছে।
পুরনো শহরের বন্দর থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক দুভ্রভনিক শহরে ঢোকার সদর দরজা Pile Gate পর্যন্ত এই রাস্তা বিস্তারিত – যা কিনা সিটি ওয়ালের কাছে এসে শেষ হয়।
এই Stradun রাজপথের দুই পাশের স্থাপত্য গুলোর গঠন শৈলীতে খুবই সামঞ্জস্য দেখা যায়। সতেরো শতাব্দীতে এক ভয়ানক অগ্নিকান্ডে এই রাস্তার দুই পাশের স্থাপত্য গুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল – তারপর যখন স্থাপত্য গুলো নতুন করে তৈরি হল, শহর কতৃপক্ষ এই রাস্তার দুই পাশের স্থাপত্য গুলোয় যেন সামঞ্জস্য থাকে সেই দিকে কড়া নজর দিয়েছিল। তাই আজও সতেরো শতাব্দীর ঐ স্থাপত্য গুলোয় সামঞ্জস্য দেখা যায়।
গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই রাস্তা শুরু মাত্র পথচারীদের জন্যে নিবেদিত। ঐতিহাসিক দুব্রভনিকের প্রায় প্রতিটি সরু গলি পথ এই রাস্তায় এসে মিলে যায়। তাই দুভ্রভনিক শহরে এসে এই রাজপথে একবার অন্তত আসতেই হয়।
দুপুরের শুরুতেই দেখি আন্তর্জাতিক ভিড়ে, নানা ভাষার বার্তালাপে এই রাস্তাটির প্রতিটি কোন গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে। বিশ্ব প্রাণের মেলা মেশায়, আসা যাওয়ায় এই রাস্তাটির ঐতিহাসিক-আধুনিক পরিবেশ ভরপুর হয়ে ওঠে। আর সেই পরিবেশের সাক্ষী হয়ে এই রাস্তাটিকে ভালো লাগতে বাধ্য হতে হয়। নিজেদেরকে সেই বিশ্ব প্রাণের এক অংশীদার ভাবতে ভালো লাগে। ইউরোপের সবচেয়ে রোম্যান্টিক পথের মধ্যে অন্যতম দুভ্রভনিক শহরের এই রাজপথ। এই রাজপথ ধরে মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে চলাই যে নিয়ম।
সুন্দর
Thank you.