আগ্রার খাওয়া দাওয়া – পেঠা (Petha)

petha

আপনারা আগ্রায় এসে পেঠা খেয়েছেন? – আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভারের প্রথম প্রশ্ন ছিল এটাই।

যে শহরে প্রতিদিন কয়েক হাজার নতুন মানুষ আসে, সেই শহরের মানুষ এক নজরেই বাইরের মানুষকে দেখে চিনে নিতে পারে। তাই আমাদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল।

না, খাই নি। – আমাদের উত্তর ছিল।

আসলে আগ্রায় এসে তাজমহল দেখার আগে অনেকেই পেঠা খায়, খেয়ে দেখুন, খুব ভালো লাগবে – হাসি মুখে ড্রাইভারটি বলল।

আগ্রার মানুষদের মধ্যে যেন এক সহজাত গাইড থাকে। বাইরের মানুষ দেখে তাকে আগ্রার বিষয়ে বলে দেওয়া, কিংবা ইতিহাস নিয়ে একটু চর্চা করা মনে হয় ওদের সহজাত প্রবৃত্তি।

আমি বললাম – পেঠা মানে তো অতিরিক্ত মিষ্টি। আসলে মিষ্টি একটু কম খেতে চাই।

আরে খান। কিছু হবে না। আগ্রার বিখ্যাত পঞ্ছি পেঠা খেয়ে দেখুন। কোন ক্ষতি হবে না। পেঠার সমস্ত ক্যালোরি বের করে দেওয়া হয়। – ড্রাইভারের সরল স্বীকারোক্তি।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম – কি করে ক্যালোরি বের করে দেওয়া হয়?

ক্যালোরি সচেতন মানুষদের জন্যে এতো  মারাত্মক এক সুখবর! অনেকটা ঠিক – খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না – টাইপের ব্যাপার!!!

ব্যাস, ড্রাইভার তার পেঠা বিষয়ক জ্ঞানের ঝাপি খুলে ধরল।

বলল – পেটা তিন রকমের হয়। এক চিনি দিয়ে তৈরি, দুই স্যাকারিন দিয়ে তৈরি, তিন মধু দিয়ে তৈরি। আর মধু দিয়ে তৈরি পেঠার ক্যালোরি এক্কেবারে বের করে দেওয়া হয়। আগ্রার মানুষ পেঠা ও ডালমট একসঙ্গে খায়।

ঠিক আছে কোথায় এক পেঠার দোকানের সামনে একটু থেমে যেও। পেঠা কিনে নেব।

আরে না। যে কোন দোকানের পেঠা একদম ভালো নয়। চলুন আপনাদের পেঠার ফ্যাক্টরি আউটলেটে নিয়ে যাবো।

পেঠার ফ্যাক্টরি আউটলেটে গিয়ে শুরু হল পেঠা চাখা। সত্যি বলতে কি, পেঠা বলতে আমি যা জানতাম – চিনির রসে জারানো চালকুমড়োর শুকনো মোরব্বা।

সেই ছেলেবেলায় খাওয়া পেঠা – শক্ত পাথরের মতো পেঠা – সেই প্রাথমিক ধারণাটাই বলদে গেল আগ্রার সেই পেঠার ফ্যাক্টরি আউটলেটে গিয়ে।

রকমারি পেঠার সম্ভার সাজানো। আগ্রার পেঠা শিল্পীরা নাকি বর্তমানে নানা ধরণের পেঠা তৈরি করে চলেছে – আঙ্গুরি পেঠা, পান পেঠা, চকোলেট পেঠা, নারকেল পেঠা, গোলাপ পেঠা, নারকেল পেঠা, আরও কত ধরণের পেঠা। আর ওরা প্রত্যেক ধরণের পেঠা এক টুকরো করে চেখে দেখতে দেয়।

যত বলি না না আর না – আর দিও না। ততই দেখি চেখে দেখানোর জন্যে এক টুকরো অন্য ধরণের পেঠা চেখে দেখতে বলে।

চেখে না দেখলে জানবেন কি করে?

বললাম – অনেক মিষ্টি খাওয়া হয়ে যাচ্ছে।

আরে খান। সব পেঠার ক্যালোরি বের করে দেওয়া হয়েছে – সরল ভাবে পেঠা বিক্রেতা জানালো।

তবে আর কি। খাই – বলে বড় এক টুকরো পেঠা মুখে পুরে দিলাম।

আঙ্গুরি পেঠা – জাফরানের রঙ্গে রাঙ্গানো, মিষ্টি এক গন্ধ, মুখে দিলে মিলিয়ে যাওয়া এক স্বাদ। মিষ্টি প্রেমীদের জন্যে এক সুখ স্বর্গের অনুভূতি।

পান পেঠা – পানের স্বাদের সবুজ পেঠা।

আর মিষ্টি খেয়ে যখন মুখ সম্পূর্ণ মিষ্টি হয়ে যায় – খাওয়া হয় নোনতা ও ঝাল ডালমট। বলে ওরা এক বাক্স ডালমট এগিয়ে দিল। বলল – আগ্রায় এসে পেঠা ও ডালমট না খেয়েই ফিরে যাবেন?

চালকুমড়োর পেঠা তৈরির পদ্ধতি নাকি কয়েকশো বছরের পুরনো। মুঘল রান্নাঘরে প্রথম এই পেঠা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছিল। শাহ্‌জাহান তার মুঘল রাঁধুনিদের তাজমহলের শ্বেত পাথরের রঙের মতো দেখতে এক মিষ্টি তৈরি করতে বলেছিল। আর সেই মুঘল রান্নাঘরে তৈরি হয়েছিল পেঠা – যা আজও বিখ্যাত। যা আজও আগ্রায় নব নব রূপে নানা ভাবে বিরাজমান করে।

আগ্রার আসল পেঠা সাধারণত, সাদা ও নরম হয় – অনেকটা ঠিক তাজমহলের মার্বেল রঙের সঙ্গে মেলানো আগ্রার ডেলিকেসি। তাজমহল তৈরির সময়ে শ্রমিকদের অন্যতম খাদ্য ছিল এই পেঠা।

যাইহোক, রকমারি পেঠা চেখে দেখার পর, মিষ্টি না খাওয়ার সমস্ত সংযম খড়কুটোর মতো ভেসে গেল – কয়েক বাক্স পেঠা কিনে তবেই ফেরার পথ ধরলাম। অসুবিধে কোথায় – ক্যালোরি তো সব বের করে দেওয়া হয়েছে!!!

আর তাছাড়া, যারাই তাজমহল দেখতে যায় – তাজমহলের স্বাদকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার জন্যে এক বাক্স পেঠা কিনতে ভোলে না। আমরাও ভুলি নি।

 

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Asia, India, Travel, Uttar Pradesh and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান