অনেকে বলে পশ্চিমঘাটের পাহাড় দেখার উত্তম সময়, অক্টোবর মাস। বর্ষার বৃষ্টি শেষে, যখন প্রকৃতি স্নান সেরে নিয়ে সবুজের চাদর জড়িয়ে, প্রচুর নাম না জানা লাল, হলুদ, বেগুনি রঙের জঙ্গলি ফুল ফুটিয়ে দিয়ে পরিপাটি করে সেজে নেয় – ঠিক তখুনি পশ্চিমঘাটের অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। তাই, পশ্চিম ঘাটের মাথেরন হিল স্টেশনকে দেখারও উত্তম সময় – অক্টোবর।
পুনে ও মুম্বাইের মতো দুই বড় শহরের কাছে এই ছোট্ট পাহাড়ি জায়গা – মাথেরন। এই দুই বড় শহরের মানুষের বড়ই প্রিয় – বলা যায় ছুটির দিনের নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা এই মাথেরন। তাই, অক্টোবরের ছুটিতে এখানে ভিড় হওয়াই স্বাভাবিক।
যাইহোক, পশ্চিম ঘাটের এই ছোট হিল-স্টেশনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে এই হিল-স্টেশন, সম্পূর্ণ গাড়ি মুক্ত। এবং এই জায়গাকে “hottest hot-spots” of biodiversity hotspot চিহ্নিত করা হয়েছে। মাথেরন ভারতবর্ষের সবচেয়ে ছোট হিল ষ্টেশন। এখানে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে – ঘোড়া কিংবা হাতে টানা রিক্সা।
বিভিন্ন ধরণের বৈচিত্রময় স্থানীয় গাছ পালা, পশু, পাখি, মাছ – যা পৃথিবীর আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না, মানুষের জন্যে যারা পৃথিবী থেকে খুব তাড়াতাড়ি লুপ্ত হওয়ার পথে, এবং প্রায় সত্তর শতাংশ লুপ্ত হয়েই গেছে – সেই গাছ পালা ও পশু পাখিকে সংরক্ষণের জন্যে Norman Myers ১৯৮৮ তে, পৃথিবীর বুকে biodiversity hotspot চিহ্নিত করার কথা বলেছিলেন। Norman Myers কে যখন ২০০৭ এ টাইম ম্যাগাজিন Hero of the Environment আখ্যা দিয়েছিল, পরিবেশ নিয়ে তাঁর কাজ অনেকের চোখে পড়েছিল, বিশেষ করে, পরিবেশবিদদের নজরে পড়েছিল। এবং পৃথিবীর নানা জায়গায় biodiversity hotspot চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এশিয়াতে যে বিখ্যাত biodiversity hotspot গুলি আছে – তার মধ্যে পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম ঘাটের অনেক অংশই ভারতবর্ষে আছে, আর ইন্দো-বার্মার কিছু অংশ উত্তরপূর্ব ভারতবর্ষে পড়ে। Sundaland biodiversity hotspot এর নিকবোর দ্বিপপুঞ্জও ভারত বর্ষের অন্তর্গত।
বিভিন্ন প্রজাতির স্থানীয় গাছপালা ও পশু পাখি যখন আরও বিপন্নের মুখে চলে যায়, সেই জায়গাকে পরিবেশবিদরা hottest hot-spots ঘোষণা করে।
পশ্চিমঘাটের পাহাড় শ্রেণী ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় স্থান পেয়েছে, এবং পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম “hottest hot-spots” of biodiversity hotspot হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, পশ্চিমঘাটের পাহাড় শ্রেণীর জঙ্গল, প্রায় কয়েক হাজার বিভিন্ন রকমের গাছপালা, পশু পাখি, পোকা মাকড়ের বাসস্থান। এবং অনুমান করা হয়, এখনো এখানে অনেক অনাবিষ্কৃত প্রজাতির গাছপালা, পোকা মাকড় ও পাখি বসবাস করে।
পৃথিবীর বুকে, কোন জায়গাকে hottest hot-spots ঘোষণা করতে হলে যে পাঁচটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ প্রয়োজন, যেমন গাছপালা ও পশুপাখির প্রজাতি গুলো স্থানীয় ও অতি শিগগিরি বিপন্নের মুখে হতে হয় ইত্যাদি, তার প্রায় প্রতিটি বৈশিষ্ঠই পশ্চিমঘাটের পাহাড় শ্রেণী, পুর্ব-হিমালয়ের পাহাড়শ্রেণী ও ইন্দ-বার্মার পাহাড় শ্রেণীতে বর্তমান। আর পশ্চিম ঘাটের ছোট্ট হিল ষ্টেশন – মাথেরনেও সেই পাঁচটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ দেখা যায়।
তাই, এই জায়গায় কোন গাড়ি চলাচল নিষেধ। Neral এ আমাদের গাড়ি রেখে, স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে মাথেরন ঢোকার মুখে পৌঁছে গেলাম। মাথেরনে ঢোকার টিকিট কেটে, যে পাহাড়ি লাল মাটির রাস্তার সঙ্গে পরিচয় হল – সেই রাস্তা ধরে সিধে হেঁটে যাওয়াই নিয়ম। কিংবা ঘোড়া ও হাতে ঠ্যালানো রিক্সা ভাড়া করা যায়।
চলবে