মাথেরনে ঢোকার মুখেই প্রচুর ঘোড়া যাত্রীর জন্যে অপেক্ষা করে। ছোট্ট এক টয় ট্রেনও আছে – যা কিনা পাহাড়ি পথে দম নিতে নিতে মাথেরনের বাজার এলাকায় পৌঁছে দেয়।
কিন্তু, শেষ অক্টোবরের যে সময়ে আমরা মাথেরনে পৌঁছলাম – শুনি, সেই টয় ট্রেন গত দুই মাস ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে। আর টয় ট্রেনের সেই লাইনই পথ প্রদর্শনের কাজ করে। ছোট রেল লাইন ধরে হাঁটতে শুরু করলে সেই রাস্তা বাজার এলাকায় নিয়ে যায়। পথে পড়ে নানান হোটেল।
এখানে, এই সবুজ বনানীর পথ ধরে, আমরা হাঁটতে রাজি আছি। দুই পাশের ঘন জঙ্গল ঝুঁকে এসে রাস্তায় আলোছায়ার আলপনা এঁকে দিয়েছে। সকালের নরম আলোয় পাহাড়ের গায়ে নতুন ঘাসের মোলায়েম কার্পেট, হাওয়ায় দুলতে দুলতে স্বাগত জানায়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে হতে হেঁটে হোটেলে পৌঁছতে হয়। হোটেলে পৌঁছে, খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে একটু তরতাজা হয়ে, আবার বেরিয়ে পরি।
এই হিল স্টেশনে প্রচুর পয়েন্ট আছে – যেখান থেকে পশ্চিম ঘাটের সৌন্দর্য দেখা যায়। শেষ দুপুরের নরম আলোয়, ঘোড়ায় চড়ে, প্রতিটি পয়েন্ট দেখে নিতে নিতে মনে হয় – আমরা আজকের পৃথিবীর বাইরের এক অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা।
জঙ্গল পাহাড়ের ঘন সবুজ আদিমতা, বুনো গন্ধ, ঘোড়ার চলার শব্দ, নরম রোদ, পাহাড়ের গায়ে থমকে থাকা কুয়াশার রহস্যময়তা – সব মিলিয়ে এখানে যেন আদিম মাতাল মনমাতানো এক নেশা জড়ানো থাকে। এখানে এসে সেই আদিমতায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না।
এখানের পয়েন্ট গুলো থেকে, পশিচম ঘাট পাহাড়ের খাড়া ধাপ গুলো দেখে মনে হয়, এখানে পাহাড় যেন ক্ষমা করতে জানে না – মুহূর্তের ভুল পদক্ষেপ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এখানে ঘোড়ার খুরের ছন্দ বদ্ধ খট খট শব্দে সন্ধ্যা নামে – নীলাভ সন্ধ্যা। যে সন্ধ্যা এসে ঢেকে দিয়ে যায় পরকুপাইন পয়েন্ট থেকে দেখা দূরের পাহাড়। কুয়াশা ঢাকা পশ্চিমঘাটের পাহাড় যখন সন্ধ্যার আড়ালে মিলিয়ে যেতে শুরু করে, ঘোড়া গুলো ঘরে ফেরার জন্যে চঞ্চল হয়ে ওঠে। যাত্রী পিঠে নিয়ে, অন্ধকার জঙ্গলের পথ ধরে দ্রুত পা চালায়।
ফিরে আসতে আসতে মনে হয় – থাকবে, এই ছোট্ট জায়গা আমার ভ্রমণ স্মৃতি জুড়ে থাকবে। হয়তো, বার বার এই জায়গার গল্প বলতে আমি ক্লান্ত হবো না। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।