সুইজারল্যান্ডের কাঠের সেতুটি (Kapellbrücke, Lucerne, Switzerland)

সুইস শহর লুসার্ন (Lucerne) শহরের মাঝ বরাবর যে লেকটি আছে, তার উপর দিয়ে সরাসরি চলে গেছে কাঠের তৈরি এক সেতু। কাঠের  ছাঁদ দিয়ে ঢাকা ঐতিহাসিক এই কাঠের সেতুটি শুধুই পথচারীদের জন্যে। সেতুটি লুসার্ন শহরের মুখ্য এক টুরিস্ট আকর্ষণ। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ফোটোগ্রাফড সেতুর মধ্যে অন্যতম এই কাঠের সেতু। অবশ্য শুধু ফটোগ্রাফ নয় – সেতুটি জলরঙ ও তেলরঙেও স্থান পেয়েছে। শতাব্দী কাল ধরে এই সেতুটি, সুইস শহর লুসার্নের এক অতি চেনা ছবি তৈরি করে। কাঠের এই সেতুটিকে, লুসার্ন শহরের প্রতীকও বলা যায়।

বছরের যে কোন সময়ে ঐ কাঠের সেতুটিকে দেখতে গেলে, দেখা ও শোণা যায় – পৃথিবীর নানা দেশের ভ্রমণকারী ও স্থানীয় পথচারীদের পায়ের শব্দে এই সেতুটি ছন্দ ময়।

একটু কান পেতে শুনলে সঙ্গীতশিল্পীরা হয়তো এক সেই কাঠের সেতু ধরে পথ চলার শব্দে ছন্দবদ্ধ এক নক্সা খুঁজে পাবে।

অতীতে সাধারণত কাঠ দিয়েই সেতু তৈরি হতো – কিন্তু, সেই সেতুর বেশিদিন টিকত না – দশ বা পনেরো বছর। তবে, কাঠের সেতু গুলোকে ঢেকে দিলে, অনেক মজবুত হতো। দীর্ঘদিন টিকে থাকতো, বৃষ্টি, রোদ, তুষার পাত থেকে সেতু গুলো রক্ষা পেত।

চোদ্দ শতাব্দীর তৈরি সেই সেতুটির মাঝে এক টাওয়ার দেখা যায় – অতীতে এই টাওয়ার বন্দীদের রাখার জায়গা ছিল, বর্তমানে যা টুরিস্ট সুভ্যনির শপে বদলে গেছে। আমরা অবশ্য টাওয়ারটিকে বন্ধই দেখেছিলাম।

কাঠের এই সেতুটির পাশেই আছে, St. Peter’s Chapel, সেই চ্যাপেলের নামেই এই সেতুর নামকরণ হয়েছে – Kapellbrücke যার আক্ষরিক মানে দাঁড়ায় Chapel Bridge।

কাঠের এই ঢাকা সেতুটি ধরে হাঁটতে শুরু করলে – ছাদের গায়ে, দেখা যায় অনেক পুরনো ছবি, হাতে আঁকা।

আবার জায়গায় জায়গায় অনেক ছবি নষ্টও হয়ে গেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শহরের মাঝে এক কাঠের সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ হয়তো একটু কঠিন – তাই তিরানব্বইয়ে আগুন লেগে এই কাঠের সেতুটির প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। এর গায়ে আঁকা ছবি গুলোও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল – তবে লুসার্ন শহরের এই প্রতীককে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে ওরা চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখে নি।

ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো, কাঠের তৈরি এই ঢাকা সেতু Kapellbrücke – যা কিনা প্রাচীন ইউরোপের ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার প্রমান বহন করে। সেই সেতু ধরে হেঁটে যাওয়ার অনুভুতিটি সত্যি একটু অন্যরকম।

সেই সুইস শহরে, বিকেল বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হওয়া, প্রাচীন কাঠের সেতু, লেক ছুঁয়ে আসা ফিনফিনে ঠাণ্ডা হওয়া, লেকের জলে রাজহাঁসের চলা – সবকিছু নিয়ে যেন এক রোম্যান্টিক সময়ের ছবি ঘন হয়ে উঠছিল। আর সেই রোম্যান্টিক সময়ের ছবিতে বাঁধা পড়ে গিয়েছিলাম আমরা।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel, Western-Europe and tagged , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান