আল্পসের পাহাড় শ্রেণীর গায়ে, ছবির মত সাজানো সব আল্পাইন গ্রাম – রূপকথার গল্পে ঠিক যেমন গ্রামের কল্পনা হয়, সবুজ ঢালু মাঠ, স্বচ্ছ জলের নীল লেক, নদী, ঝর্না, সবুজ-নীল পাহাড়, যার চূড়া গুলো সামারেও সাদা তুষারে ঢাকা, মেঘের দল যে গ্রামের দেখাশোনা করে, পাথরে বাঁধানো ঐতিহাসিক শহরের রাস্তা, প্রাচীন স্থাপত্য, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ, শ্বাস-রুদ্ধকর সৌন্দর্যের সমাবেশ, শান্তি – এক কথায় পৃথিবীর বুকে রাজকীয় সৌন্দর্যের দেশ এই সুইজারল্যান্ড।
কিন্তু, এই দেশের মানুষ যতটা তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে গর্বিত – তার চেয়েও বেশি গর্বিত ওদের Swiss neutrality নিয়ে। আর সেই কথাটাই ওরা বার বার টুরিস্টদেরকে গর্ব করে বলে – যখন প্যানারামিক ট্রেন টুরিস্টদের নিয়ে, দেশটার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত দেখাতে দেখাতে নিয়ে যায় – ওরা সেই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখিয়ে তাদের নিউট্রালিটির কথাই বার বার বলে।
১৮১৫ সালে প্যারিস ট্রিটি সাক্ষর করার পর থেকে, সুইসরা অন্য কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে কোন যুদ্ধ করে নি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো নিরপেক্ষ দেশের মধ্যে, সুইজারল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে আছে।
তাই, এই দেশের কোন জায়গায়, কখনোই কোন কামান, ট্যাঙ্ক, বা অস্ত্র শস্ত্রের কোন অহেতুক প্রদর্শন নেই, সামরিক শক্তির অহেতুক অহংকার নেই। আছে শান্তির এক অপূর্ব বাতাবরণ, মনোরম পরিবেশ, আথিতেয়তা, নির্মল প্রকৃতি।
আসলে, যে কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একদম কাছে যারা থাকে, তারাই সেই সৌন্দর্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারে, তারাই সেই জায়গাকে ভালবাসতে পারে, যত্ন নিতে পারে।
আর, সুইসরা সেটা খুব ভালো ভাবেই জানে। যদি, ওরা যুদ্ধ বিগ্রহ, হানাহানি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় – ওদের সবচেয়ে বড় সম্পদ – প্রকৃতিই ওদের হাত থেকে হারিয়ে যাবে। কেউই হয়তো আর ওদের দেশকে দেখতে যাবে না।
তাই, সুইসরা বারবার শান্তির কথাই বলে। গত দুইশো বছর ধরে, সুইসরা সেটাই করে এসেছে – আর ওদের এই শক্তপোক্ত যুদ্ধ নিরপেক্ষতা, ওদেরকে দিয়েছে অর্থনৈতিক স্থিরতা, আর্থিক উন্নতি। তাই যারাই ঐ দেশটিকে একবার দেখতে যায় – পৃথিবীর বুকে এতো অপরূপ সৌন্দর্যকে সুরক্ষিত, সংরক্ষিত রাখার জন্যে, সুইস নিরপেক্ষতাকে মনে প্রাণে ধন্যবাদ জানায়।