ইতালির সরকার যখন মার্কনির কাজকে কোন গুরুত্বই দিল না, মার্কনি ব্রিটিশ পোস্টাল কতৃপক্ষের কাছে ঐ ওয়ারলেস টেলিগ্রাফির কথা পেশ করল। ব্রিটিশরা তৎক্ষণাৎ মার্কনির ঐ ওয়ারলেস টেলিগ্রাফির উজ্জ্বল সুদূর ভবিষ্যৎ দেখে নিয়েছিল, তাই মার্কনি সঙ্গে সঙ্গে ঐ ওয়ারলেস টেলিগ্রাফি পেটেন্ট করিয়ে নিয়েছিল।
বিজ্ঞানের থিয়োরি ইত্যাদি নিয়ে অনভিজ্ঞ যুবক মার্কনি, হার্টজের এক্সপেরিমেন্ট থেকে তার শুরু করলেও, দিন রাত পরিশ্রম করে হার্টজের সেই ওসিলেটরে উৎপন্ন তরঙ্গের ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করে চলেছিল – বিশেষ করে ওয়ারলেস টেলিগ্রাফির নতুন দিগন্ত মার্কনির রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল বলা যায়।
মার্কনি অ্যান্টেনার ব্যবহার করে, ব্রিটিশ পোস্ট অফিস থেকে প্রথম ওয়ারলেস মর্স কোড পাঠিয়েছিল। ১৮৯৯ এর মার্চ মাসে মার্কনি প্রথম ব্রিটেন থেকে ইংলিশ চ্যানেলের ওপারে ফ্রান্সে তারবিহীন মর্স কোড পাঠিয়েছিল।
কিন্তু, মার্কনির এই সাফল্য যেন মার্কনিকেই ভাবিয়ে তুলেছিল – কারণ, ঐ ওয়ারলেস মর্স কোডের কোন প্রাইভেসি ছিল না, যে কেউই সেই কোড রিসিভ করতে পারতো। মার্কনি বুঝতে পেরেছিল – ওয়ারলেস কমুনিকেশনে তার সাফল্য পেতে হলে, তাকে কমুনিকেশনের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রতিটি সিগন্যালকে একে ওপরের থেকে আলাদা করতে হবে।
এদিকে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার অলিভার জোসেফ লজ (Sir Oliver Joseph Lodge) ঠিক সেই সময়েই ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের ওয়েভলেংথ নিয়ে একটু অন্যরকম কাজ করে চলেছিলেন। তিনি, ট্রান্সমিটারের ওয়েভলেংথ নিয়ন্ত্রণ করে রিসিভার দিয়ে টিউনিং করে শুধু ঐ একটি ওয়েভ লেংথকে রিসিভ করার কাজে সফল হয়েছিলেন এবং সেই কাজটিকে তিনি পেটেন্টও করেছিলেন।
মার্কনি অলিভার লজের কাছ থেকে, তার সেই ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের বিশেষ ওয়েভ লেংথ টিউনিংএর পেটেন্টটি কিনে নিয়েছিল।
তারপর, নতুন শতাব্দীর আকাশ বাতাস নানান ওয়ারলেস সিগন্যাল দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল।
১৯০১ সালে প্রথম ত্রান্স-আটলান্টিক ওয়ারলেস টেলিগ্রাফ পাঠানো হয়েছিল। মার্কনি সেই ওয়ারলেস টেলিগ্রাফ যন্ত্রের নায়ক হয়ে উঠেছিল। কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকার নেভির সমস্ত জাহাজ মার্কনির সেই ওয়ারলেস টেলিগ্রাফ যন্ত্র বসিয়ে নিয়েছিল – যাতে নিজস্ব প্রাইভেট ওয়েভলেংথে মর্স কোড ত্রান্সমিট ও রিসিভ করা যায়।
ওয়ারলেস টেলিগ্রাফে খবর আদান প্রদান করা যাচ্ছে, সবই ঠিক চলছে। কিন্তু, ১৯০৬ এর ক্রিসমাস ইভের দিন, ম্যাসাচুসেটের এক ওয়ারলেস অপারেটর, হেডফোনে কান লাগিয়ে, ওয়ারলেস মোর্স কোডের বদলে মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পেল, আর ক্রিসমাসের মিউজিকও শুনতে পেয়েছিল। সেই দিনটি, সেই ওয়ারলেস অপারেটরের জীবনের এক স্মরণীয় দিন হয়ে উঠেছিল – তার ইয়ারফোন থেকে যখন সে মানুষের গলা শুনেছিল, আশ্চর্য হয়ে ভেবেছিল হয়তো কোন ম্যাজিক হচ্ছে।
যার গলা, ও মিউজিক সে শুনতে পেয়েছিল, তিনি বিজ্ঞানী Reginald Aubrey Fessenden , তিনি সেই সময় রেডিও টেকনোলোজি, এ এম রেডিও নিয়ে কাজ করছিলেন এবং পেটেন্টও করিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম ওয়ারলেস রেডিওতে বক্তৃতা ও সঙ্গীত ট্রান্সমিশন করেছিলেন।
চলবে