যোগাযোগ – অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের অতি প্রয়োজনীয় ছিল। বিশেষ করে প্রাচীন কালে যুদ্ধের সময়ে, শত্রুর উপস্থিতি ও পরিস্থিতির ব্যাপারে দ্রুত খবর আদান প্রদানের উপরে যুদ্ধের ফলাফল নির্ভর করত।
দ্রুত খবর আদান প্রদানের জন্যে রেড ইন্ডিয়ান থেকে শুরু করে, ইউরোপের নানান নাইট, ডিউক, রাজা নেপোলিয়ান নানা ধরনের সংকেত, যেমন ধোঁয়ার সংকেত, সূর্যের আলোর প্রতিফলন, ড্রাম বাজানোর শব্দ, জাতীয় পতাকার উত্তোলন ইত্যাদি ব্যবহার করে খবর আদান প্রদান করতো ।
উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, বিজ্ঞান প্রথম খবর আদান প্রদানের এই প্রয়োজনীয় ময়দানে পা রেখেছিল। আর বিজ্ঞানের পদক্ষেপ মানেই – এক নতুন দিগন্ত।
হ্যাঁ, খবর আদান প্রদানের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সুচনা হয়েছিল। আবিষ্কার হয়েছিল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক টেলিগ্রাফি। বৈজ্ঞানিক উপায়ে টেলিগ্রাফ তারের মাধ্যমে প্রথম খবর আদানপ্রদান সম্ভব হয়েছিল।
আর, সেই সময়ে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে খবর আদান প্রদানের জন্যে ত্রান্স-আটলান্টিক টেলিগ্রাফের তার স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গিয়েছিল টেলিগ্রাফ তার থেকে ইলেকট্রিক কারেন্ট লিক হয়ে গিয়ে, কিছু দূরের কোন ধাতুর জিনিসকে চুম্বকে পরিণত করে দিচ্ছে। সে ছিল এক রহস্য, কোন কানেকশন ছাড়াই কি করে ধাতু চুম্বকে পরিণত হতে পারে?
কিছুদিনের মধ্যেই, ম্যাক্সওয়েলের গাণিতিক ক্যালকুলেশন সেই রহস্য সমাধান করেছিল । ১৮৫৬ তে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল গণনা করে প্রমান করলেন যে, ইলেকট্রিক স্পন্দন কোন মাধ্যম ছাড়াই, তরঙ্গের আকারে স্পেসের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে। এদের বলা হয় ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ। আর এই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ গুলোর আকার ও গতিবেগ আলোর গতিবেগের সমান।
তাই, বলা যায়, উনিশ শতাব্দীতে রেডিও ওয়েভের ইতিহাসের শুরুই হয়েছিল ক্লার্ক ম্যাক্স ওয়েলের সেই গণনা থেকে। অবশ্য, তারও আগে, মাইকেল ফ্যারাডের গণনায় প্রথম ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিও ওয়েভের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল।
যাইহোক, তারপর ১৮৮৭ সালে, জার্মান বিজ্ঞানী হাইনরিখ হার্টজ, ম্যাক্সওয়েলের থিয়োরিকে এক ছোট্ট এক্সপেরিমেন্ট করে প্রমান করেছিলেন। দেখিয়েছিলেন, কি ভাবে ইলেকট্রিক সিগন্যাল কোন মাধ্যম ছাড়াই, কোন ধাতুর তার ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে। সেই ছিল রেডিও ট্রান্সমিশনের ইতিহাসের প্রথম পদক্ষেপ। হয়তো, ঠিক সময়ে ঐ এক্সপেরিমেন্টের ভবিষ্যৎ দেখে, পেটেন্ট করিয়ে নিলে রেডিও ওয়েভ আবিষ্কর্তা হিসাবে বিজ্ঞানের ইতিহাসের পাতায় হাইনরিখ হার্টজ এর নাম লেখা হত।
হার্টজ এর সেই এক্সপেরিমেন্টের ঠিক পাঁচ বছর পরেই ইতালির মার্কনি ঐ রেডিও ওয়েভের কথা শুনে, তৎক্ষণাৎ ঐ ওয়ারলেস কমুনিকেশন সিস্টেমের বানিজ্যিক ভবিষ্যৎ দেখে ফেলেছিল। বিশেষ করে, শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে যোগাযোগই ব্যবসার মুখ্য অস্ত্র, সেখানে এই ওয়ারলেস কমুনিকেশন খুবই কাজে লাগতে পারে – বিজ্ঞানকে যে ব্যবসায় পরিণত করা যেতে পারে তা ঐ ইতালিয়ান যুবক মার্কনির মাথায় চলে এসেছিল।
মার্কনি, তার ছোট্ট ল্যাব তৈরি করে, বিজ্ঞানী হাইনরিখ হার্টজ এর এক্সপেরিমেন্ট থেকেই তার গবেষণা শুরু করেছিল। বলা যায়, গত কয়েক বছরে, রেডিও ওয়েভ নিয়ে অন্যদের থিয়োরি ও এক্সপেরিমেন্ট, বুদ্ধিমান মার্কনির কাজকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল। কিন্তু, দেখা গেল, ওয়ারলেস কমুনিকেশন নিয়ে মার্কনির সেই কাজকে ইতালিয়ান সরকার কোন গুরুত্ব দিল না।
চলবে