কি দেখলে? বল – শার্লটের খুবই শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিল। – কি দেখলে?
একটু দম নিয়ে ফিলিপ বলল – দেখি, এক পরিবার। বাবা, মা, সঙ্গে কোলের এক বাচ্চা ছেলে, ও পাশে একটা পাঁচ ছয় বছরের মেয়ে। সবাই মাথায় বড় বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ বেঁধে নিয়ে ব্যাগের ভেতরে শ্বাস নিচ্ছে। ওদের সঙ্গে প্রচুর প্লাস্টিকের ব্যাগ। ওরা কার্বনডাই অক্সাইড ডিটেক্টরের ব্যাপারে শুনেছে, আর সীমান্তে এসে ঐ ব্যাগ গুলোর ভেতরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। একে বন্ধ ট্রাক গুলোর ভেতরে অক্সিজেন কম থাকে, তার উপরে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে শ্বাস নিচ্ছে, পুরো পরিবারই দম বন্ধ হয়ে মারা যেত। কোন বুদ্ধি নেই! পাগল?
কোন দেশের লোক ছিল? – শার্লট জানতে চাইল।
না সে ওরা বলবে না, কোন দেশ থেকে আসছে, তা কিছুতেই ওরা বলতে চায় না, যদি সেই দেশে ফিরে যেতে বলা হয়! তবে বলল, ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড যাচ্ছিল। ওদের নিঃশ্বাস নিতে এতোই কষ্ট হচ্ছিল, ঠিক করে কথাও বলতে পারছিল না। – ফিলিপ উত্তর দিল।
কি করলে ওদের? – শার্লটের কৌতূহল উপছে পড়ছিল।
ফ্রান্সের পুলিশের হাতে দিয়ে দিলাম, ওদের পরিচয়ের কাগজ পত্র সঙ্গে থাকলে দেশে ফিরিয়ে দেবে! নয়তো ফ্রেঞ্চ পুলিশ কাস্টডিতে কিছুদিন রেখে, ওদের দেশে ফিরে যাওয়ার নোটিশ দেবে। – ফিলিপ জবাব দিল।
একটু থেমে আবার বলল – তবে মুশকিল কি জানো? যাদের পরিচয়ের কোন কাগজপত্র নেই, তারা চাইলেও নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে না। আর সেটা ওরা খুব ভালো করেই জানে, তাই এই দেশে ঢুকেই প্রথমেই ওরা নিজেদের সমস্ত পরিচয় পত্র ধ্বংস করে ফেলে – ফিলিপ থামল।
হুম – শার্লট কি যেন ভাবতে ভাবতে কফির কাপে চুমুক দেয়।
শীতের বেলা এখানে খুব তাড়াতাড়ি পড়ে আসে। সাড়ে চারটের মধ্যেই সোনালি বিকেলের কোন তোড়জোড়, আড়ম্বর, সাজগোজ ছাড়াই কেমন যেন ঝুপ করে সন্ধ্যা হয়ে যায় – ধূসর সন্ধ্যা।
এইবার দক্ষিণ ফ্রান্সে যেন একটু বেশীই শীত পড়েছে। দক্ষিণ ফ্রান্সে সাধারণত খুব একটা ঠাণ্ডা পড়ে না। তাই ক্রিসমাসের ছুটিতে কিংবা নতুন বছরের দিনটি কাটাতে অনেকেই দক্ষিণ ফ্রান্সে বেড়াতে আসে। তবে, দক্ষিণ ফ্রান্সের মানুষদের কখনো কখনো তুষার সাদা ক্রিসমাস দেখারও সৌভাগ্য হয়। এবার যেমন করে জাঁকালো ঠাণ্ডা পড়েছে – হয়তো, এবারের ক্রিসমাস তুষার ধবল হতে পারে – হোয়াইট ক্রিসমাস।
সাধারণত, ছেলেবেলা থেকেই হোয়াইট ক্রিসমাস শার্লটকে খুবই আনন্দিত করে। কিন্তু, এই মুহূর্তে ফিলিপের কথা শুনতে শুনতে শার্লটের কাছে তার এই আনন্দের চিন্তা ভাবনা গুলো কেমন যেন গুলিয়ে গেছে, এলোমেলো হয়ে গেছে। শপিং, লাইটিং ইত্যাদির মধ্যে যেন কোন আনন্দই খুঁজে পাচ্ছিল না – সব কিছুই অর্থহীন মনে হচ্ছিল। হয়তো, সেই এলোমেলো ভাবনা গুলো সাময়িক – নাঃ, অহেতুক চিন্তার শেকড় গুলোকে উপড়ে ফেলতে হবে। যা করার করে যেতে হবে – মাথা ঝাঁকিয়ে শার্লট ভাবল।
চলবে
মাঝে বেশ কিছুদিন ব্লগিং-এ ভাঁটা পড়েছিল আমার, ফলে অনেক কিছুই মিস্ করে গেছি… আগের পর্বগুলি সময় পেলে পড়ে ফেলবো…
ধন্যবাদ। আমারও কিছুদিন ব্লগিং-এ ভাঁটা ছিল…