একদিকে Tagus নদী, অন্যদিকে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ক্যাথিড্রাল, আরেক দিকে পর্তুগীজ স্মৃতি স্তম্ভ, মিউজিয়াম, যা কিনা পর্তুগালের ইতিহাসের আবিষ্কারের স্বর্ণযুগের গল্প বলে – সব মিলিয়ে লিসবন শহরের এই বিশাল স্কোয়ার পর্তুগালের অন্যতম জনপ্রিয় টুরিস্ট গন্ত্যব্য।
প্রতিদিন পৃথিবীর নানা কোন থেকে প্রচুর মানুষ এই জায়গায় আসে। শহরের মধ্যে জমজমাট এই জায়গা যেন সমগ্র বিশ্বের এক মিলন ক্ষেত্র। এই জায়গায় এলে একঝাক ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে একই সঙ্গে পাওয়া যায়।
যদিও এই স্কোয়ার আশেপাশের ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলো থেকে বয়সে অনেক নবীন – বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব প্রদর্শনীর জন্যে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু, বর্তমানে লিসবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান বলা যায়। বিশাল এই স্কোয়ারের মধ্যমণি ফোয়ারাকে ঘিরে বিশাল এক বাগান।
পনেরো ও ষোল শতাব্দীতে যে পর্তুগীজরা পৃথিবী আবিষ্কারের নেশায়, সুদূরের স্বপ্নে, এই জায়গা থেকে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল, পর্তুগালকে, পর্তুগালের ইতিহাসকে সম্বৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল – তাদের সেই অবদানের কথা স্মরণ করে তৈরি স্মৃতি স্তম্ভ যেমন নজর কাড়ে, তেমনি নজর কেড়ে নেয় বিশাল এই স্কোয়ারের চত্বরের ছবি।
মার্বেল পাথর দিয়ে আঁকা পৃথিবীর ম্যাপে পর্তুগীজদের আবিষ্কারের যুগের সমুদ্র পথের ছবি দেখে দেখে, খুঁজে নিতে হয় – পর্তুগীজরা সেই সময়ে কোন কোন দেশে গিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছিল।
এই জায়গা থেকে নাবিকরা যে পথ ধরে ভারতবর্ষ আবিষ্কার করেছিল – শ্বেত পাথরের গায়ে সেই পথ আঁকা দেখে, সেখানে উপস্থিত হয়ে, পনেরো বা ষোল শতাব্দীর মানুষের সেই দিনের সমুদ্র পথে অভিযানের উৎসাহ, উদ্দীপনা, পথের শঙ্কার অনুমান করতে না পারলেও আজ একবিংশ শতাব্দীতে, অতি সহজেই সেই পথ অতিক্রম করে, এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পেরেছি।
তাই, ভাবতে বাধ্য হই – কোন এক পথ, কোন এক শতাব্দীর মানুষের কাছে অতি সহজ, আবার কোন শতাব্দীর মানুষের কাছে সেই পথ খুবই কঠিন। সেই ব্যাপারটা হয়তো মানুষের জীবনেও দেখা যায় – কোন কোন কাজ কেউ অতি সহজেই করে উঠতে পারে, আবার কেউ সেই অতি সহজ কাজটিই করে উঠতে বহু সময় নেয়।
যাইহোক, চারপাশের ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলো দেখে নিয়ে, বাগানের বেঞ্চে বসে একটু বিশ্রাম করে নিতে নিতে পৃথিবীর নানা কোণের নানা ধরণের মানুষের আসা যাওয়া দেখা যে ভ্রমণেরই এক অঙ্গ। আর দেখি, ঠিক তখুনি শেষ বিকেলের আলোয় কে যেন গাঢ় সোনালি রং গুলে দিয়ে বিকেলের শেষ আলোকে আরও জমাট হলুদ করে দিল – অদ্ভুত এক মায়াবী আলোয় ভরে গেল চারপাশ, Tagus নদীর বুক ছুঁয়ে দিয়ে সেই হলুদ আলো বিদায় নিতে নিতে যেন বলে গেল – চললাম, আবার হয়তো দেখা হবে পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে, অন্য কোন নদীর তীরে, অন্য কোন দিনে। আজ তোমাদের দিয়ে গেলাম এই মুহূর্ত খানি।