আকাশ চুম্বী অট্টালিকার সারি যে শহরের আকাশ রেখাকে আছন্ন করে রাখে, গতিবেগ যে শহরের মন্ত্র, সেই শহরে সাইকেলের মতো নিরীহ এক বাহন যখন বেশ ভালোই গুরুত্ব পায় – একটু আশ্চর্য বলেই মনে হয়।
ডাউন টাউন শিকাগো শহরের বেশ কয়েক জায়গাতেই নীল সাইকেল গুলো টুরিস্টদের নজর কেড়ে নেয়। অনেকেই সাইকেল গুলো ভাড়া নিয়ে ডাউন টাউন শিকাগো শহরের আকর্ষণীয় জায়গা গুলোকে আবিষ্কার করতে পারে। বিশাল ও ব্যস্ত এই শহরের ট্র্যাফিক যাতে সাইকেল চালকদের অসুবিধা সৃষ্টি না করে তার জন্যে – সাইকেল চালকদের জন্যে বিশেষ রাস্তাও দেখা যায়।
লেক মিশিগানের পাশ দিয়ে যে দীর্ঘ রাস্তাটা চলে গেছে, সেই পথ ধরে সাইকেল চালাতে চালাতে শিকাগো শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান গুলো দেখে নেওয়া যায়। লেক মিশিগানের পাশের এই রাস্তা শিকাগো শহরের অন্যতম সুন্দর জায়গা বলা যায়। তাছাড়া, নগর জীবন থেকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জন্যে শিকাগো বাসীরা অনেকেই সাইকেল চালিয়ে শিকাগোর বোটানিক্যাল গার্ডেনেও চলে যায়।
বিশাল এই ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষের মধ্যে নানা জায়গায় সাইকেল যখন একটু জায়গা করে নেয়, মনে হয় – নগর সভ্যতা ও নগর জীবন যাপন মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু, দিয়েওছে অনেক – অস্বীকার করার কথা নয়, কিন্তু কোথায় যেন সেই দেওয়া ও নেওয়ার মধ্যে এক বিশাল ফাঁক রয়ে গেছে, শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
আর সেই নগর সভ্যতার সঙ্গে দ্রুত তাল মিলিয়ে চলতে চলতে একদিন মানুষ দেখে নগর সভ্যতা তাকে যতটা দিয়েছে, তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তার বহুগুণ। তখন মানুষ আনমনা হয়ে ভাবে, হিসাব কষে – সে কি কি হারিয়েছে। তখন, তার হয়তো মনে পড়ে যায়, তার ঘরের পাশের লঙ্কা জবা গাছের কথা – যে গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে লঙ্কা জবা ফুটতো, কিংবা, তার হয়তো মনে পড়ে যায় – তার বাড়ীর সামনের ম্যাগ্নোলিয়া গাছের কথা – যে গাছে বসন্ত আসতে না আসতেই থোকায় থোকায় ফুল ফুটতো। আবার তার ছেলেবেলার সাইকেলের কথাও হয়তো মনে পড়তে পারে। সময়ের সঙ্গে সব কিছুই বদলে যায় – কিন্তু, সব বদলই কি মানুষ মন থেকে মেনে নিতে পারে? বদল কি মানুষকে যন্ত্রণা দেয় না? বহু যন্ত্রনার পরে যে বদল হয় – সেই বদলেও কি মানুষ খুশী হতে পারে? মনে তো হতে পারে – যে মূল্য দিয়ে বদল কেনা হল, তা একটু বেশী দামী হয়ে গেল কিনা? আর তখনই হয়তো শিকাগো বাসীরা সাইকেল চালায়।