সান্তা লুজিয়া পাহাড়ে (Santa Luzia, Viana do Castelo, Portugal)

এখানে অ্যাটল্যান্টিক সমুদ্র, লিমা নদী, উপত্যকা ও পাহাড় মিলে, আপন মনে, একসঙ্গে অপূর্ব ছবি আঁকে – আর বাঁকা চাঁদের মতো ঐ হলুদ সৈকত, নীল সমুদ্র, নদী ও সবুজ পাহাড়ের সেই অন্তহীন অপূর্ব ছবি আকার সাক্ষী হতে হলে অতি অবশ্যই এই সান্তা লুজিয়া পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত সান্তা লুজিয়া ক্যাথিড্রাল চত্বরে আসতে হয়।

হাতে ক্যামেরা, চোখে সুদূরের স্বপ্ন, ও প্রকৃতির মাতাল করা সৌন্দর্যে ডুব দেওয়ার এক ইচ্ছা থাকলেই হল – আর কিছু চাই না, এই শতাব্দী প্রাচীন ক্যাথিড্রাল চত্বরে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ খুশী প্রকৃতির সৌন্দর্যে চোখ ডুবিয়ে দেওয়া যায়।

পর্তুগালের এই সান্তা লুজিয়া পাহাড় অঞ্চলে, প্রত্নতাত্বিক খনন করে, মেসোলিথিক যুগ এর মানুষের বসবাসের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি, রোমান সাম্রাজ্যের বিকাশের সময়েও এই পাহাড়কে কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তাই, পর্তুগালের ইতিহাসে এই সান্তা লুজিয়া পাহাড়ের যথেষ্ট অবদান আছে।

আর, এই পাহাড় চূড়াকে এই শহরের এক ভিউ পয়েন্ট বলা যায়। সান্তা লুজিয়া পাহাড়ের উপরের ঐ অপূর্ব ক্যাথিড্রালটিও সেই ভিউ পয়েন্টের অন্তর্গত – ভিয়ানা দো কাস্তেলো শহরের যে কোন ট্র্যাভেল পোস্ট কার্ড বা পর্তুগালের ট্র্যাভেল ম্যাগাজিনের পাতায় এই সান্তা লুজিয়া থেকে দেখা পাহাড় নদীর অপূর্ব ছবি দেখা যায়।

এই শহরে পৌঁছে যে কোন মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দেয় – সান্তা লুজিয়া হিল থেকে সমুদ্র ও নদীকে দেখতে ভুলে যেও না যেন। তাই, প্রথমেই ফুনিকুলারের টিকিট কেটে এই পাহাড় চূড়ায় পৌঁছে যেতে, একদমই সময় খরচ করলাম না।

জুলাইয়ের সেই সকালে বিশাল এই ক্যাথিড্রাল চত্বর প্রায় ফাঁকা। আর ঝকঝকে সোনালি রোদ্দুর যেন চারিদিক আলোয় আলোয় ধুইয়ে দিচ্ছিল – দূরের সবুজ পাহাড়ের রেখা গুলো যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

সান্তা লুজিয়া ক্যাথিড্রালের চত্বরে দাঁড়িয়ে যদি আরও অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হতে হয় – লিফট নিয়ে সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় ক্যাথিড্রালের চূড়ায় – সেখানে কোথাও দৃষ্টি বাঁধা মানে না – সব মিলিয়ে এ এক অপূর্ব জায়গা।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনও সেই কথা স্বীকার করে নিয়েছে – পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্যের তালিকায় এই জায়াগার নাম তৃতীয় স্থানে আছে।

এখানে এসে সমুদ্র, নদী ও প্রকৃতির প্রসারতা, নির্জনতা, উদারতা দেখে মুহূর্তেই মন ভালো হতে বাধ্য। এখানে এসে, ক্যাথিড্রালের চূড়ায় দাঁড়িয়ে, প্রকৃতি ও মানুষের প্রাচীন বিশ্বাসের এই অদ্ভুত আলিঙ্গন দেখে মনে হতে পারে – যে কোন বিশ্বাসই বোধহয় প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্যকে, শান্তিকে সাধারণ মানুষের জন্যে সুরক্ষিত করে রাখে। আর সেই বিশ্বাস যত মুক্ত, প্রসারিত ততোই সুন্দর।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Southern-Europe, Travel and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান