মাটির উপরে শহর ও শহরের যানবাহন চলাচলের ব্যস্ততার সময়ে, মাটির নীচ দিয়ে ট্রেন লাইন ও ট্রেন চলাচলের ব্যাপারটা আজ আমাদের কাছে যতই সভ্যতা ও আধুনিকতার এক সাধারণ অঙ্গ বলে মনে হোক না কেন, উনিশ শতাব্দীর পৃথিবীর কাছে কিন্তু ব্যপারটা আশ্চর্যেরই ছিল।
মাটির উপরে একটা শহরের ব্যস্ত জনজীবনকে স্বাভাবিক রেখে, মাটির নীচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা ভাবাটাও তখন ছিল রীতিমত এক চ্যালেঞ্জ। আর সেই দিক দিয়ে বুদাপেস্ট বাসীরা গর্বিত – পৃথিবীর প্রাচীনতম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো লাইনের তালিকায় বুদাপেস্টের এই মেট্রো দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে – আবার সেই আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো লাইন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকাতেও স্থান পেয়েছে। আবার, এই আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোকে ইউরোপের প্রথমও বলা যায়।
উনিশ শতাব্দীতে বুদাপেস্ট শহরকে আধুনিকীকরণের জন্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল – কিন্তু, বুদাপেস্ট শহর কেন্দ্রের ক্লাসিক্যাল সৌন্দর্যকে অক্ষত রাখার জন্যে, শহর কতৃপক্ষ মাটির নীচের রেললাইন তৈরি করাকেই উপযুক্ত ভেবেছিল। তাই ইউরোপের প্রথম এই আন্ডারগ্রাউন্ড রেল লাইন তৈরি হয়েছিল বুদাপেস্টে।
প্রায় একশো কুড়ি বছরের কাছাকাছি এই প্রাচীন আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো লাইনে ট্রেন চলাচল করে, আজও যাত্রীরা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকার এই প্রাচীন মেট্রো দিয়ে যাতায়াত করে – প্রাচীন মেট্রোতে চড়ার এক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভালোবাসে – বিশেষ করে টুরিস্টরা বুদাপেস্টের এই মেট্রো দিয়ে যাতায়াত করতে খুবই ভালোবাসে – তাই, এই মেট্রো লাইনে অধিকাংশ টুরিস্টই দেখা যায়।
উপরে ঐতিহাসিক Andrássy Avenue ও নীচ দিয়ে সোজা চলে গেছে এই মেট্রো লাইন – তাই Andrássy Avenue ধরে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে এই মেট্রো ধরে সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় বুদাপেস্টের সিটি পার্ক – আসলে সেই কথা মাথায় রেখেই এই মেট্রো লাইনটি তৈরি হয়েছিল – যাতে বুদাপেস্ট সিটি সেন্টার থেকে মেট্রো নিয়ে Andrássy Avenue এর ট্র্যাফিক এড়িয়ে সরাসরি সিটি পার্কে পৌঁছে যাওয়া যায়। বুদাপেস্ট বাসীরা তাদের প্রথম ও অতি প্রয়োজনীয় এই মেট্রোকে আদর করে Millennium Underground Railway বা M1 বলে, কিংবা বুদাপেস্টের ভাষায় ” földalatti” মানে the underground ।
আর, বুদাপেস্টের সেই রাজপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে সেই আন্ডারগ্রাউন্ডের প্রাচীন ষ্টেশন গুলো, হলুদ রঙের প্রাচীন সাইনবোর্ড গুলো – মাটির নীচে যাওয়ার পথ গুলো। বুদাপেস্টের এই মেট্রো প্রমান করে প্রাচীন ঐতিহ্যকে, স্থাপত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আধুনিকীকরণ কখনো বাঁধা হতে পারে না – বরং এক সাহায্য হতে পারে। প্রাচীনকে সংরক্ষণের জন্যেও আধুনিকতা প্রয়োজন।