ইউরোপের হোটেল শিল্প (The hospitality industry of Europe)

ভোরে, জানালার পর্দা সরিয়েই দেখা যায় আল্পসের তুষার সাদা পাহাড় শ্রেণী একদম কাছে এসে ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস ফেলছে, আল্পসের গায়ে তুষারে মোড়ানো এক সুইস গ্রামের সেই ধবধবে সাদা সকাল।

আবার, ফরাসী মিদিপিরেনিসের সেই পাহাড়ি গ্রামে, মিদিপিরেনিস পাহাড় শ্রেণীর তুষার সাজানো চূড়া গুলোর ওপারে সূর্যোদয়ের লাল আভায় এক মায়াবী সকাল হওয়া দেখা – যেখানে কাঁচের জানালা খুললেই বরফের কুচি মেশানো একঝাক ঠাণ্ডা হাওয়া এসে সারাটা মুখে এলোমেলো হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়।

কিংবা, দক্ষিণ ফ্রান্সের সেই আঙুর ক্ষেতের মাঝে, ধীরে ধীরে এক সবুজ সকালের জন্ম হওয়া দেখা।

ক্রোয়েশিয়ার জঙ্গলের ঝর্ণা ও পাখির আওয়াজে ভোরের আলো ফোঁটা, যেন সেই দিনটি ভোরের অপেক্ষাতেই ছিল – কখন আলো ফুটবে, আর সেই দিনটি জঙ্গল ও পাহাড়ের এক অপূর্ব সকাল মানুষকে উপহার দেবে।

কিংবা, ডালমেশিয়ান কোস্টের সেই সকালে ঘুমচোখে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে, নীল সমুদ্র দেখা, ও সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বিশাল জাহাজ যখন দূরে পাড়ি দেওয়ার এক দুরন্ত প্রলোভন দেখায় – সবই যেন ভ্রমণ পথের এক একটি চমক মনে হয় – আর এই সমস্ত চমক গুলো উপহার দিতেই যেন ইউরোপের হোটেল শিল্প গড়ে উঠেছে।

শুধুই কি প্রকৃতির কোলেই সকাল? কিংবা ভোর? না, তা নয় – কখনো কোন এক ঐতিহাসিক শহরের এক গলি – যে গলি দিয়ে হাজার বছরের মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রবাহিত হয়ে গেছে – জানালা খুলেই সেই ঐতিহাসিক গলির দিকে চোখ রাখা।

কিংবা, রিগার সেই হোটেল, যা কিনা কিছুদিন আগেও রাশিয়ার সেনা বাহিনীর থাকার জায়গা ছিল, যার গায়ে এখনো রাশিয়ার স্থাপত্যের ছোঁয়া দেখা যায়, গল্প শোণা যায় – ইতিহাস থেকে নিয়ে প্রকৃতি, দৃশ্য, আধুনিকতা, আথিতেয়তা সবই দিতে পারে ইউরোপের হোটেল শিল্প।

ইউরোপের হোটেল গুলোয় আথিতেয়তা যদিও এক ব্যবসা, কিন্তু, সেই ব্যবসাও যেন এক শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তার সঙ্গে জুড়ে গেছে মানবিক এক ছোঁয়া ও তীব্র এক প্রফেশনালিজম।

ভোরে বেরিয়ে যাবো শুনে, ব্রেকফাস্ট বাদ পড়ে যাবে শুনে, প্রফেশনালিজম বা হোটেলের নিয়মের বাইরে গিয়ে – সেই সুইস হোটেলের ভদ্রলোক যখন এক বাক্সে ফল, ফলের জুস, ডিম ও স্যান্ডউইচ সাজিয়ে দেয়, কিংবা, ফ্লোরেন্সের সেই বাড়ী-হোটেল – যেখানে বিকেলে পৌঁছনো মাত্র গরম কফির আয়োজন করে দেয়,

কিংবা ক্রোয়েশিয়ার সেই বাড়ী-হোটেলের ভদ্রলোক, দুপুরের অসময়ে পৌঁছনো মাত্রই, বিনা শর্তে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয় – বিদেশ বিভূঁইয়ে অচেনা অজানা দেশে, অযাচিত ভাবে এই ধরণের মানবিক ছোঁয়া পেলে – ভ্রমণ যেন আরও স্মৃতি মধুর হয়ে ওঠে, পথের ছবি গুলো যেন আরও বেশী সুন্দর হয়ে ওঠে। আমাদের ভ্রমণ স্মৃতির পাতায় সেই অচেনা অজানা মানুষদের সেই মানবিক ছোঁয়া গুলো নিজেদের অজান্তেই জুড়ে যায়। ভ্রমণ শেষে, প্রকৃতি, স্থাপত্য, ইতিহাস, শহর ও তার মানুষের গল্প, ভালো লাগা সঞ্চয় করে ফিরি নিজের পথে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s