কুয়াশা ঘেরা, বৃষ্টি ভেজা দিনে, পর্তুগালের এই ছোট্ট গ্রামটিতে পৌঁছেই মনে হয়েছিল – ছবির মতো এই গ্রামটির কথা কি আগে কোথাও কখনো শুনেছি? কোন এক রূপকথার বই থেকে উঠে আসা নিঝুম শান্ত সেই গ্রামটির প্রেক্ষাপটে, ঘন সবুজ সিন্ত্রা পাহাড়ের গায়ে তখনো আটকে ছিল দলছুট মেঘের দল, আর ধূসর ভেজা দিনের সঙ্গে মানানসই ছিল, পর্তুগালের ঐতিহাসিক গ্রামের সেই সবুজ ধূসর দিনটি।
পর্তুগালের এই গ্রামটির আবহাওয়া, পর্তুগালের অন্যান্য জায়গার তুলনায় একটু ঠাণ্ডা বলে, প্রাচীন সময়ে মুরিশ থেকে শুরু করে, পর্তুগালের রাজপরিবার এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই জায়গায় প্রাসাদ থেকে শুরু করে বিশাল বাড়ী তৈরি করেছিলেন – তাই, ছবির মতো সাজানো এই রূপকথার গ্রামটি পর্তুগালের এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ – লিসবন থেকে ট্রেনে মাত্র ত্রিশ মিনিটেই এই সুন্দর গ্রামে পৌঁছে যাওয়া যায়। সিন্ত্রা গ্রামটি যদিও সবুজের এক চাদর দিয়ে মোড়ানো শান্ত এক গ্রাম, কিন্তু, সিন্ত্রা গ্রামের কেন্দ্রে মধ্যযুগীয় ন্যাশনাল প্যালেস ঘিরে টুরিস্টের ভিড় এই গ্রামের জীবন যাপনের এক অঙ্গ বলা যায়।
তাছাড়া, ছোট্ট এই গ্রামেই পর্তুগালের প্রাচীন মুরিশ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে শুরু করে, পর্তুগীজ রাজার অলংকৃত প্রাসাদ, সিন্ত্রা গ্রাম ও একে ঘিরে সবুজ পাহাড় অঞ্চল, সবই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্গত কারণ পর্তুগালের উনিশ শতাব্দীর রোম্যান্টিক আর্কিটেকচারের মনুমেন্টের মধ্যে অন্তত দশটা জাতীয় মনুমেন্টের ঠিকানা এই গ্রাম – তাই লিসবনে যারাই আসে একবার সিন্ত্রাকে দেখে যায়। ষ্টেশন থেকে নেমে একটু হাঁটলেই সিন্ত্রার রঙিন সাজানো টাউন হল সবাইকে স্বাগত জানায়।
সিন্ত্রার ঐতিহাসিক কেন্দ্রে পাথরে বাঁধানো সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে সম্পূর্ণ এক অন্য সংস্কৃতির জীবন যাপনের ঝলক দেখতে দেখতে, কিংবা গথিক স্টাইলে তৈরি ন্যাশনাল প্যালেস বা টাউন প্যালেসের প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে, নিজেকে কোন এক ঐতিহাসিক বা রূপকথার নগরীতে নিয়ে যাওয়াই যেতে পারে। আর এখানে এলে স্থাপত্য, ঐতিহাসিকতা, রূপকথা, কল্পনা, গল্প, কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টি দিয়ে সাজানো থাকে সেই রূপকথা নগরীর গল্প, যে গল্পের ছবি এখান থেকেই আঁকা হয়, যে গল্পের চরিত্ররা এই গ্রামেই থাকে। আর পর্তুগালের সেই ঐতিহাসিক রূপকথা গ্রাম থেকে আমরা কিছু মুহূর্তকে আলতো করে নিয়ে এসে আমাদের ভ্রমণ স্মৃতির পাতা সাজাই।