অক্টোবরের সেই বৃষ্টি ভেজা কণকণে শীতল দিনে, যখন গথেনবার্গ শহরের প্রধান স্কোয়ার Götaplatsen এর সামনে পৌঁছলাম, বৃষ্টির তেজ আরও আরও বেড়ে গিয়েছিল – বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন ঘন হতে হতে, ছোট ছোট নুড়ি পাথরের আকার ধারণ করেছিল – আর সঙ্গে ছিল তীব্র মাতাল হাওয়ার তেজ ও ঠাণ্ডা – ছাতাকে কোন ভাবেই বাগে আনার উপায় ছিল না – শুনেছিলাম, শেষ অক্টোবরে নাকি গথেনবার্গের আবহাওয়া এমনি মাতাল থাকে – কখন রোদ, কখন বৃষ্টি, কখন ছোট্ট নুড়ি পাথরের আকারের শিলাবৃষ্টি বৃষ্টি হতে শুরু করে দেবে – কেউই নাকি বলতে পারে না।
যাইহোক, বেশ কিছুক্ষণ ধরে, Götaplatsen স্কোয়ারের একদিকে City Theatre হলের ঢাকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই অচেনা সুইডিশ শহর ও তার ঠাণ্ডা বৃষ্টির ছাঁট নিতে নিতে সেই অদ্ভুত প্রকৃতির উন্মাদনা দেখতে খারাপ লাগছিল না।
আর স্কোয়ারের সামনেই দেখা যায়, সমুদ্র দেবতা Poseidon এর মূর্তি – যার একহাতে মাছ ও আরেক হাতে সমুদ্র শঙ্খ – সমুদ্র দেবতাও অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে চলেছেন। সেই সমুদ্র দেবতার স্ট্যাচুর নীচ থেকেই শুধু হয়ে গেছে গথেনবার্গের বিখ্যাত ও প্রধান রাজপথ – Avenyn , আর এই স্কোয়ারের তিনদিক ঘিরে গথেনবার্গের উল্লেখযোগ্য ও সুন্দর স্থাপত্য – যেমন, কনসার্ট হল ও Gothenburg Museum of Art , সিটি থিয়েটার হলের অবস্থান।
আর্ট মিউজিয়ামের বারান্দায় দাঁড়ালে, গথেনবার্গের বুলেভার্ডের প্রসারিত রূপ দেখা যায় – দেখা যায়, এই বুলেভার্ডকে কেন্দ্র করে এই শহরের ব্যস্ততার ছবি, আর সেই ছবির একদম কেন্দ্রে থাকে সমুদ্র দেবতা Poseidon এর স্ট্যাচুটি, এই সমুদ্র দেবতাকে গথেনবার্গ শহরের প্রতীক বলা যায় – তাই, গথেনবার্গ শহরের পোস্টকার্ড ছবিতে এই সমুদ্র দেবতাকে প্রায়ই দেখা যায়।
সুইডেনে আবার অক্টোবরের বৃষ্টি যে কোন সময়েই থেমে যায়, তাই বৃষ্টি থেমে গেলেই, এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে গথেনবার্গের সেই রাজপথ ধরে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিলাম – বৃষ্টি যখন সব ধুয়ে দিয়েছিল, শহরটি যেন আরও পরিপাটি হয়ে গিয়ে, নতুন দিনের জন্যে সেজে নিয়েছিল। অক্টোবরের পাতা ঝরানোর রঙে রঙিন গাছ গুলো হয়ে উঠেছিল আরও রঙিন উজ্জ্বল।
গথেনবার্গ শহরের আসল ছন্দটিকে জানতে হলে, শহরকে দেখতে হলে অতি অবশ্যই এই বুলেভার্ড ধরে হাঁটতে হয়, দু’পাশের দোকানের সাজ সজ্জা, দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে হয় – এই পথে তো একবারই আসা, একবারই পথ চলা, তাই একবারেই যা কিছু দেখার সবই প্রান ভরে দেখে নিতে হয়।