অত্যাধুনিক লাইব্রেরী (The Joe and Rika Mansueto Library, Chicago)

আজ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল দুনিয়া যতই গ্রাস করে নিক না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থার একদম কেন্দ্রে কিন্তু আজও লাইব্রেরীর যথেষ্ট অবদান আছে, ডিজিটাল ইনফরমেশনের সঙ্গে সঙ্গে আজও গবেষকরা বই পড়তেই ভালোবাসে – ডিজিটাল ও প্রিন্টিং মিডিয়া যেন একে অন্যের বন্ধু – আর সেই চিরন্তন সত্যকে পুনঃস্থাপন করতেই যেন শিকাগো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের কেন্দ্রে, অতি সম্প্রতি এই অত্যাধুনিক Joe and Rika Mansueto লাইব্রেরী তৈরি হয়েছে।

যেখানে আশ্চর্য ইঞ্জিনিয়ারিং কুশলতা ও দক্ষতার সঙ্গে এসে মিশেছে অত্যাধুনিক ডিজাইনের কারুকাজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর, যেখানে আমেরিকার বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার লালন করা হয়, সেই জায়গার এক ঝলক দেখতে অনেকেই শিকাগো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আসে। অদূর ভবিষ্যতে লাইব্রেরীর রূপ কেমন হতে পারে তারই নমুনা এই Joe and Rika Mansueto লাইব্রেরী।

অত্যাধুনিক এই লাইব্রেরীর রিডিং রুমকে দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে  – শিকাগো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যেন ফ্লায়িং সসার নেমেছে –  অনেকটা যেন কল্পবিজ্ঞান।

ষ্টীল ও কাঁচের তৈরি উপবৃত্তাকার ছাদের নীচে প্রায় আট হাজার স্কোয়ার ফিটের বিশাল রিডিং রুমে একসঙ্গে প্রচুর ছাত্র ছাত্রী ও প্রোফেসর বসে যে কোন বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে পারে – এখানে শিকাগো শহরের মেঘলা আকাশ থেকে শুরু করে উজ্জ্বল দিনের নীল আকাশ, তুষারপাতের ধূসরতা সবই ধরা দেয় – প্রাকৃতিক আলোয় পড়াশোনা যেন পড়াশোনার পরিবেশকে আরও জম জমাট করে তোলে – এখানের পরিবেশই যেন পড়াশোনার প্রেরণা।

অত্যাধুনিক এই লাইব্রেরীর স্টোরেজ ও বই আদান প্রদানের সমস্ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় – এক মিনিটের মধ্যে যে কোন বই হাতের কাছে পাওয়া যায়। পৃথিবীর প্রায় অনেক মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য বই, যার হয়তো আর প্রিন্ট  পাওয়াই যায় না – তার ডিজিটাল সংস্করণ এখানে অতি অনায়াসে পাওয়া যায় – আর সব কিছুই মাটির নীচে Automated Storage and Retrieval System এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও সংরক্ষিত হয়।  এখানে নানা বিষয়ে গবেষণার জন্যে  নানা ধরণের বই, জার্নাল, পেপার সবই অতি সুরক্ষিত ভাবে, লোহার বাক্সের ভেতরে রাখা হয়।

শিকাগো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের মধ্যে যে কোন ডিপার্টমেন্ট থেকে, যে কোন বই বা জার্নাল খুঁজতে হলে, লাইব্রেরির ওয়েবসাইটের অনলাইন ক্যাটালগ দেখে রিকোয়েস্ট পাঠাতে হয় – সেই রিকোয়েস্ট গিয়ে লাইব্রেরীর মাটির নীচে অবস্থিত Automated Storage and Retrieval System কে এক্টিভেট করে, তারপর সেই বই বা জার্নাল লাইব্রেরীর স্টাফের কাছে চলে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান হয়ে যায়, ও যিনি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন তার কাছে ই-মেল চলে যায় – বই বা জার্নাল রেডি হয়ে গেছে।

আর এই গোটা সিস্টেমে বই খোঁজার পদ্ধতি চলতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। তাই, কেউ শিকাগো ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে অনলাইনে বই বা জার্নালের রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়ে, হেঁটে লাইব্রেরীতে পৌঁছতে পৌঁছতে, তার বই লাইব্রেরীর স্টাফের কাছে চলে আসে। তারপর যখন কেউ বই ফেরত দেয় – লাইব্রেরীর স্টাফ শুধু বইয়ের বারকোড স্ক্যান করে এক বিশেষ বক্সে বইটিকে রেখে দেয় – অটোম্যাটিক সিস্টেম, পুনরায় আগের জায়গায় সেই বই রেখে দেয়। আর সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে মানুষের চিন্তা ধারাকে, মানুষের সৃষ্টিকে, গবেষণাকে সুরক্ষিত রাখার এই আশ্চর্য ব্যবস্থা সত্যিই আশ্চর্য করে – বিশেষ করে, আমাদের মতো মানুষ, যারা একটা বইয়ের খোঁজে লাইব্রেরীর বইয়ের ভিড়ে বহু, ঘুঘু ডাকা হলুদ দুপুর গুলো কাটিয়ে দিয়েছিল।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Travel, USA and tagged , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s