লিমা নদী যেখানে অ্যাটল্যান্টিকের সঙ্গে এসে মিশেছে, সেই নদী মোহনার পাশে প্রাচীন এক পর্তুগীজ গ্রাম Viana do Castelo । এই গ্রামের জনসংখ্যাও হাতে গোণা। মাছ ধরা, চাষ বাস, আঙুর চাষ, জাহাজ সারানো এখানের মানুষের অন্যতম পেশা, আর উল্লেখযোগ্য ব্যবসার মধ্যে আছে অল্প ট্যুরিজম – কিন্তু, টুরিস্টদের সংখ্যাও এখানে হাতে গোণা। এক নির্জন শান্ত এক পর্তুগীজ গ্রাম বা মফঃস্বল শহর – এই ভিয়ানা দো কাস্তেলো। সময় এখানে বড়ই ধীর লয়ে চলে।
এই পর্তুগীজ গ্রামটির বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ এই গ্রামটি ছেড়ে, বহু বহু আগে চলে গেছে বড় বড় শহরে, কেউ বা চলে গিয়েও ফিরে এসেছে। আবার কেউ কেউ হয়তো অর্থনৈতিক যুগের বড় বড় শহরের চাকচিক্য, গতিবেগ, আধুনিকতার হাতছানি অগ্রাহ্য করে, গ্রাম ছাড়তে না পেরে, গ্রামের সবুজ মায়ার টানে, মাটির টানে রয়ে গেছে গ্রামেই।
আর যারা চলে গেল, আর ফিরল না, যারা মিশে গেল বিশ্বায়নের স্রোতে, তাঁদের জন্যে, তাঁদের কথা মনে করে, যারা রয়ে গেল গ্রামে, তারা প্রতি সন্ধ্যায় সুর বাঁধে – পর্তুগীজ লোকসঙ্গীতের প্রাচীন সুর, এক অদ্ভুত সুর। সেই ছন্দময় সুরের তালে পা ফেলে পর্তুগীজ স্থানীয় যুবক, যুবতী, কিশোর, কিশোরী ও পৌঢ় পৌঢ়ারা।
তাঁদের পড়নে থাকে পর্তুগীজ জাতীয় পোশাক – স্থানীয় মানুষরা যাকে – Traje de Lavradeira বলে, আবার পর্তুগালের মানুষ এই বিশেষ পোশাকটিকে ভিয়ানা দো কাস্তেলোর পোশাক বা Minho costume বলতেও ভালোবাসে। সাধারণত মেয়েদের পোশাক গুলো দুই ধরণের রং এর হতে পারে – লাল ও কালো। আনন্দ ও যৌবন বোঝাতে লাল রঙের পোশাক ও দুঃখ বোঝাতে কালো পোশাক।
নতুন কোন মানুষ এই পর্তুগীজ গ্রামে পা রাখলে তাঁদের জন্যেও তারা তাঁদের হাতে বোনা পোশাক পড়ে, লোকসঙ্গীতের সুরে লোকনৃত্যের উৎসব করতে দ্বিধা করে না। প্রতিটি ছুটির দিনে ও বাজার বসার দিনে, ভিয়ানা দো কাস্তেলোর বাজার এলাকায় দেখা যায় সেই স্থানীয় মানুষের লোকনৃত্যের ঝলক – অতি স্বতঃস্ফূর্ত সেই নৃত্য ও সুর।
আবার সারাদিনের কাজের শেষে সন্ধ্যায় এই মফঃস্বলের মানুষ শহরকেন্দ্রে এসে জমায়েত হয়ে লোকসঙ্গীতের সুরে মেতে উঠতে ভালোবাসে – এক অদ্ভুত প্রাচীন পরিবেশ তৈরি হয়।
এই লোকনৃত্য শুধুই কি টুরিস্টদের সামনে নিজেদের প্রাচীন সংস্কৃতির অস্তিত্ব ঘোষণা করার প্রচেষ্টা, নাকি বিশ্বায়ন নামের এক অচেনা শক্তির গ্রাস থেকে ছোট ছোট গোষ্ঠীর নিজস্ব পরিচয় বজায় রাখার, এক সাংস্কৃতিক সংগ্রাম – কে জানে, তবে উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন – পৃথিবীতে বৈচিত্রময় সংস্কৃতি আছে বলেই বোধহয় পৃথিবী এতো সুন্দর। বিবিধের মাঝে মিলন মহান – এতেই বোধহয় পৃথিবী সম্পূর্ণ হয়।