তাই, অতি সাধারণ যন্ত্রপাতি নিয়ে Campbell একটু ঝুঁকি নিয়েই সূর্যগ্রহণের ফোটো তুলতে রাজি হলেন। পূর্ণ সূর্যগ্রহনের সময় সূর্য সম্পূর্ণ ঢেকে যাওয়ার পরে, যখন প্রথম তারা দেখা যায় – Campbell সেই অপূর্ব মাহেন্দ্রক্ষণের ফোটো তুলতে চাইছিলেন – কিন্তু, মনে হয় প্রকৃতি এতো সহজে, মানুষের কাছে নিজের গুপ্ত রহস্যের সমাধান মেলে ধরতে চায় না – আবার সেই কালো মেঘ সূর্যকে ঢেকে দিতে এগিয়ে আসছিল – যেন রাশিয়ার সেই ঘটনারই পুনরাবৃতি হচ্ছিল।
কিন্তু, হঠাৎই ঠিক সেই অদ্ভুত মাহেন্দ্রক্ষণে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল – Campbell সঙ্গে সঙ্গে সেই অপূর্ব দৃশ্যের ফোটো তুলতে শুরু করেছিলেন। যেন সেদিন রহস্যময়ী প্রকৃতি আইনস্টাইনের থিয়োরিকে প্রমান করার জন্যেই বদ্ধপরিকর ছিল।
আমেরিকার খবরের কাগজে আইনস্টাইনের থিয়োরির পরীক্ষার কথা ছাপা হল – আমেরিকার খবরের কাগজ সেই প্রথম আইনস্টাইনের কথা উল্লেখ করল। Campbell তার তোলা সূর্য গ্রহনের ফোটো গুলো আরেক জ্যোতির্বিদ Curtis কে দিলেন – যিনি, ফোটো গুলো দেখে বিচার করবেন – আইনস্টাইনের থিয়োরি ঠিক না ভুল।
কিন্তু, Curtis এমন কিছুই দেখতে পারলেন না – যা দিয়ে প্রমান করা যায় আইনস্টাইনের থিয়োরি ঠিক বা ভুল। Curtis কাছ থেকে কোন উত্তর পাওয়া গেল না।
এদিকে, যুদ্ধের পরে ইউরোপ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল, যুদ্ধের ঠিক পরেই জার্মান বিজ্ঞানীদের বিদেশ যাওয়া আসায় নিষেধাজ্ঞা ছিল – এমনকি, আইনস্টাইনও সেই সময় জার্মানি ছেড়ে কোথাও যেতে পারতেন না।
কিন্তু, Eddington এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল – তিনি পরের পূর্ণ সূর্যগ্রহণের ( May 29, 1919 ) ফোটো তোলার জন্যে আফ্রিকা যাত্রা করলেন – Eddington আইনস্টাইনের থিয়োরি ও গণনায় বিশ্বাস করেছিলেন, এবং আশা করেছিলেন যে তিনি পূর্ণ সূর্যগ্রহনের ফোটো তুলে তার সেই থিয়োরির প্রমান জোগাড় করতে পারবেন। তাই, Eddington একাই আফ্রিকা যাওয়ার ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করলেন না।
এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ায় বসে Campbell তার সূর্য গ্রহণ পর্যবেক্ষণের রেজাল্ট প্রকাশ করার জন্যে তৈরি হচ্ছিলেন – পৃথিবীর দুই জায়গা, দুই মহাদেশের মধ্যে আইনস্টাইনের থিয়োরির প্রমানের প্রচেষ্টা যেন এক ভারসাম্য বজায় রাখছিল। Campbell বার বার তার তোলা ফোটো দেখে বুঝতে চেষ্টা করছিলেন – আইনস্টাইন ঠিক না ভুল – কিন্তু, যতবারই দেখছেন, মনে হচ্ছিল আইনস্টাইন ভুল! এদিকে, ইংল্যান্ডের Eddington এর সঙ্গেও আমেরিকান Campbell এর এক সুপ্ত প্রতিযোগিতা ছিল। Eddington তো আফ্রিকায় সূর্যগ্রহণ দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন – যে কোন দিন আইনস্টাইনের থিয়োরির প্রমান জোগাড় করতে পারেন।
এদিকে Eddington প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে সমুদ্র পথে যাত্রা করে আফ্রিকার কাছের এক দ্বীপ island of Príncipe র জঙ্গলে যন্ত্রপাতি নিয়ে পৌঁছে গেলেন – সেই সময় আফ্রিকার জঙ্গল মানেই ম্যালেরিয়া, মশা, ও বিষাক্ত সাপের আপন দেশ ছিল। সেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে প্রায় একমাস ধরে Eddington ও তার সঙ্গী মিলে টেলিস্কোপ স্থাপন করল।
ঠিক সূর্য গ্রহনের দিনেই আবার সেই মেঘ-বৃষ্টি শুরু হল, Eddington এর সমস্ত পরিশ্রম ধুইয়ে দিতে শুরু করেছিল – হঠাৎই এক টুকরো মেঘ সরে গিয়ে আকাশে এক কালো চাঁদ দেখা গেল – তাড়াতাড়ি Eddington একের পর এক ফোটো তুলতে শুরু করেছিলেন – তখনকার সময়ে ফোটো তোলা তো আজকের মতো সহজ ছিল না – এক্সপোজার, লাইট, fundamental error সব কিছুর দিকে লক্ষ্য রেখে, এক একটা ফোটোগ্রাফিক প্লেট বদলে বদলে, এক একটা ফোটো তুলতে হোতো – তাই সেই সময় খুব কম সময়ের মধ্যে এক দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছিল – তার একমাত্র ধ্যান ও উদ্দ্যেশ্য ছিল – পূর্ণ সূর্য গ্রহনের পরে যে প্রথম তারার উদয় হয় তার ফোটো তোলা। কিন্তু, দেখা গেল, প্রায় প্রত্যেকটা ফোটোগ্রাফিক প্লেটেই মেঘের ছবি এসেছে – শুধু শেষের কয়েকটা প্লেটে একটু ভালো ফোটো দেখা যাচ্ছিল।
ভাবা যায়, আফ্রিকার এক গভীর জঙ্গলে সাপ, মশা সমস্ত কিছুর উপদ্রব উপেক্ষা করে এক বিজ্ঞানী গভীর মনোযোগ দিয়ে গণনা করে চলেছেন।
চলবে